ইরান আর পারমাণবিক বোমার দখল থেকে খুব বেশি দূরে নেই—এমনই সতর্ক বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর (আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে মন্ডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৬ এপ্রিল) ইরান সফরে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেন, ইরান এখনো সম্পূর্ণভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক নয়, কিন্তু তারা খুব দ্রুত সেই ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। এটি এখন সবাইকে মানতেই হবে।
পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণকে ধাঁধার টুকরো জোড়ার সঙ্গে তুলনা করে আইএইএ প্রধান বলেন, ইরানের কাছে ইতোমধ্যেই সেই প্রযুক্তি ও উপাদান রয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজন হয়। তারা চাইলে যেকোনো সময় সেগুলো একত্রিত করতে সক্ষম।
এই সফরে গ্রোসি তেহরানে ইরানের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সেই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর থেকে আবারও ইরানের কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
চুক্তি ভঙ্গের পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর থেকে তেহরান ধীরে ধীরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়াতে থাকে। এতে ইরান কতটা এগিয়েছে—তা নিয়ে এখন বিশ্বের অনেক দেশ উৎকণ্ঠিত।
আইএইএর প্রধান বলেন, এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আস্থা এবং যাচাই—এই দুইটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য সংস্থাটি প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে গ্রোসি স্বীকার করেছেন, বর্তমানে ইউরোপকে এই আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে এবং ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তির কাঠামো এখন আর কার্যকর নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি সত্যিই পারমাণবিক বোমার নির্মাণের দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের নজর রয়েছে গ্রোসির তেহরান সফরের দিকে—এই সফর কি ইরানকে থামাতে পারবে, নাকি বিশ্ব আরও একটি পরমাণু শক্তির আবির্ভাবের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে?