বিশ্ব

হুমকি ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্বে শেষ হলো দ্বিতীয় দফার যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক

হুমকি ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্বে শেষ হলো দ্বিতীয় দফার যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠক


মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক হুমকির মধ্যেই পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনা সম্পন্ন করেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ আলোচনার ধরন ছিল বেশ জটিল ও ভিন্নধর্মী—প্রতিনিধি দল দুটি মুখোমুখি বসেনি। বরং বসেছিল আলাদা দুটি কক্ষে, আর এক কক্ষের বার্তা আরেক কক্ষে পৌঁছে দিয়েছে ওমানের কূটনীতিকরা।

স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ এপ্রিল) ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত ওমান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হয় এই ‘পরোক্ষ আলোচনা’। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি এ বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।

এই বৈঠকে ইরানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।

প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে এটি ছিল দুই দেশের মধ্যকার দ্বিতীয় দফার আলোচনা। প্রথম দফার আলোচনা হয়েছিল মাত্র এক সপ্তাহ আগে, ওমানের রাজধানী মাস্কাটে।

প্রথম বৈঠক সম্পর্কে আরাগচি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘এক ধরনের আন্তরিকতা’ লক্ষ্য করা গেলেও ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে তেহরানের।

শনিবারের বৈঠকে ইরান স্পষ্ট করে জানায়, আলোচনার বিষয়বস্তু কেবল তাদের পরমাণু কর্মসূচি ও যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি অযৌক্তিক ও অবাস্তব দাবি না তোলে, তাহলে একটি চুক্তি সম্ভব।

কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি ইরানের সমর্থন নিয়েও আলোচনা চায়, যা তেহরান প্রত্যাখ্যান করছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসনের সময় ইরানের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি হয়েছিল, যার মাধ্যমে তেহরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

সম্প্রতি আবার আলোচনার পথে ফিরেছে ওয়াশিংটন। তবে এই আলোচনা যতই এগোচ্ছে, ততই উত্তেজনা বাড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

এদিকে, ইসরায়েল বসে নেই। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন এবং কূটনৈতিক আলোচনার পথ বেছে নেন।

এছাড়া ফরাসি দৈনিক লা মনেতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, তেহরান পারমাণবিক বোমা তৈরির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।

সুতরাং, কূটনৈতিক আলোচনা চললেও বাস্তবতা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চাপা উত্তেজনার আগুন ক্রমেই দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে। আলোচনার পরিণতি কোন দিকে যাবে—তা এখনো অনিশ্চিত।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।