যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌরুটের ফেরি সার্ভিস। ফেরি বন্ধ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সাগর উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটে বর্তমানে যে ফেরিটি চলছে, তা নদীতে চলাচল উপযোগী। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সন্দ্বীপ চ্যানেল খুব উত্তাল থাকে। এ সময় সাগরে ফেরি চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
বিআইডব্লিউটিসির চট্টগ্রাম জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার গোপাল চন্দ্র মজুমদার কালবেলাকে বলেন, সাগর এখন উত্তাল। বর্তমানে এ ফেরি সাগরে চালানো সম্ভব নয়। আমরা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ফেরি বন্ধ করার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। এখন ঢাকা থেকে যখন বন্ধ করতে বলবে, আমরা তখনই বন্ধ করে দেব।
তিনি আরও বলেন, আমরা বন্ধ করার আগে জানাব। এরই মধ্যে যেসব গাড়ি সন্দ্বীপ বা চট্টগ্রামে অবস্থান করছে, সেগুলো স্থানান্তর করতে হবে। অন্যথায় অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এ দিকে ফেরি চলাচল বন্ধ হলে বাঁশবাড়িয়া ঘাট থেকে পন্টুন দুটি সরিয়ে নেবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ফেরিঘাটের দুপাশে থাকা আমাদের পন্টুনগুলো অনেক দামি। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই ফেরি বন্ধ হয়ে গেলে বাঁশবাড়িয়া ঘাট থেকে পন্টুনগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বসবাস করে। দৈনন্দিন কাজ, জীবন-জীবিকা, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো জরুরি কাজে এ জনপদের বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে জেলা শহর চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল ও সন্দ্বীপের মাঝখানে রয়েছে উত্তাল নৌ-চ্যানেল, এ নৌপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিলোমিটার। এ পথ পাড়ি দিতে শিশু, নারী ও বয়োবৃদ্ধ যাত্রীরা নৌযাত্রায় প্রতিনিয়ত অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন।
কখনো এক বুক, কখনোবা এক কোমর পানি, আবার কখনো এক হাঁটু পরিমাণ কাদা মাড়িয়ে কূলে উঠতে হয়। সূর্য ডোবার পর বন্ধ হয়ে যায় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দিনের পর দিনও থাকতে হয় বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। এসব কিছু বিবেচনা করে ২০২২ সালে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে ফেরি সার্ভিসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সন্দ্বীপের সন্তান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের তত্ত্বাবধানে কাজে নতুন করে গতি পায়।
গত ২৪ মার্চ পাঁচ উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে এ ফেরি সেবার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তবে সাগর উত্তাল থাকায় এক মাসের মধ্যেই ফেরি বন্ধ হওয়ার পথে।