দুই দশকের দীর্ঘ যাত্রার শেষ প্রান্তে এসে আর্জেন্টিনার জার্সিতে লিওনেল মেসির প্রতিটি মুহূর্তই যেন ইতিহাসের অংশ হয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে বাছাইপর্বের ম্যাচে সেই ইতিহাসে যোগ হলো নতুন অধ্যায়—মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে শেষবারের মতো আনুষ্ঠানিক ম্যাচে নেমে মেসি উপহার দিলেন জোড়া গোল, পেলেন অগণিত করতালি আর অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা। আর মেসির জোড়া গোল ও লাউতারো মার্টিনেজের গোলে আর্জেন্টিনাও জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে।
রোসারিওর এই মহাতারকা ম্যাচের শুরু থেকেই ছিলেন সবার কেন্দ্রবিন্দু। খেলার আগে তিন ছেলে—থিয়াগো, মাতেও ও সিরোকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন তিনি। গ্যালারির ৮০ হাজার দর্শক দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান তাদের নায়ককে। স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জোও পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ভিআইপি বক্স থেকে দেখেছেন সেই আবেগঘন দৃশ্য।
খেলার ৩৯ মিনিটে লিয়ান্দ্রো পারেদেসের নিখুঁত পাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন জুলিয়ান আলভারেজ। নিজে শট না নিয়ে সতীর্থকে খুঁজে নেন তিনি। মেসি ঠাণ্ডা মাথায় চিপ শটে বল জালে জড়িয়ে দেন—স্টেডিয়াম মুহূর্তেই উৎসবে ফেটে পড়ে। সমর্থকেরা গান ধরেন, ‘লিও মেসি আছে পাশে, পুরো পথ আমরা পাড়ি দেব একসঙ্গে।’
দ্বিতীয়ার্ধে আবারও জ্বলে ওঠেন তিনি। দ্রুত ফ্রি-কিক থেকে শুরু হওয়া আক্রমণে নিকো গঞ্জালেসের ক্রসে লাওতারো মার্টিনেস হেডে গোল করেন। এরপর থিয়াগো আলমাদার সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় মেসি সহজ ট্যাপ-ইনে পূর্ণ করেন জোড়া গোল। চলতি বাছাইপর্বে এটি তার অষ্টম গোল, যা তাকে শীর্ষ গোলদাতা বানিয়েছে।
এ রাতটিকে বিশেষ করেছে কেবল গোল নয়, মেসির অশ্রুসিক্ত আবেগও। ওয়ার্ম-আপের সময় থেকেই চোখে পানি জমে উঠেছিল। খেলার পরও বারবার করতালিতে ভেসেছেন। ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা, ফাইনালিসিমা—সব জয় করেছেন তিনি। এবার দেশীয় মাটিতে বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচকে স্মৃতির অমর পাতায় তুলে রাখলেন নিজের জাদুতে।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ইকুয়েডরের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে আর্জেন্টিনার বাছাই মিশন। তবে সমর্থকদের হৃদয়ে মেসির এই মনুমেন্টাল রাত দীর্ঘদিন থেকে যাবে অমলিন স্মৃতি হয়ে।