বিশ্ব

আপনার আঙুলে ঝলমলে আংটি ফিলিস্তিনি নিধনের অর্থ জোগাচ্ছে না তো?

আপনার আঙুলে ঝলমলে আংটি ফিলিস্তিনি নিধনের অর্থ জোগাচ্ছে না তো?


বিশ্বখ্যাত হীরার ব্র্যান্ড ডি বিয়ারস, টিফানিজ, বুলগারি, হ্যারি উইনস্টন, কার্তিয়ার ও সিগনেট জুয়েলার্স। ব্র্যান্ডগুলো ইসরায়েল থেকে প্রক্রিয়াজাত হীরা কিনে বিক্রি করে যাচ্ছে। বর্তমানে হীরার তৈরি আংটি, দুল, চেইন, ব্রেসলেট ও নেকলেসের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে বিয়ের আংটি বা লাক্সারি জুয়েলারি হিসেবে হীরার জুড়ি নেই।

মিডলইস্ট মনিটরে প্রকাশিত আয়ারল্যান্ডের মানবাধিকারকর্মী সিয়ান ক্লিনটনের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এই বাণিজ্যে হীরা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত হওয়ার ঝুঁকি জানার পরও তা অব্যাহত রাখছে।

গত দুই দশক ধরে ইসরায়েলের অর্থনীতির একটি মূল ভিত্তি হলো হীরা রপ্তানি। ২০২৪ সালে এ শিল্পের মাধ্যমে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, হীরা শিল্পের আয়ের একটি বড় অংশ সরাসরি ইসরায়েলের সামরিক বাজেট ও ফিলিস্তিনে চলমান হত্যাযজ্ঞের জন্য ব্যবহার হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বেত্ সেলেম, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংস্থা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু হীরা শিল্প এখনও এই পরিস্থিতি অস্বীকার করে এবং সরাসরি এই বাণিজ্য অব্যাহত রাখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবহেলা নৃশংসতায় সমর্থনের শামিল।

গাজায় হামলার কারণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অনেক দেশে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির দাবির পাশাপাশি ইসরায়েলকে বয়কট, নিষেধাজ্ঞা ও একঘরে করার ডাক উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটে বিতর্কিত হয়ে উঠছে হীরা শিল্প।

কিম্বারলি প্রসেস (কেপি) ও রেসপনসিবল জুয়েলারি কাউন্সিল (আরজেসি) ‘কনফ্লিক্ট ফ্রি’ বা ঝুঁকিমুক্ত হীরার সনদ দিয়ে থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সনদপত্র শুধু যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের অর্থায়ন সংক্রান্ত হীরার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইসরায়েলি হীরার সঙ্গে এটি প্রযোজ্য নয়। এই সনদপত্র একটি চালাকি মাত্র।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সামরিক হামলা চলার সময় কেপির সাম্প্রতিক সভায় কোনো প্রতিনিধি গণহত্যার বিষয়ে কথা বলেননি। উল্টো, রাশিয়া বা আফ্রিকার হীরার সহিংসতার ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। এই দ্বৈত মানদণ্ড প্রকাশ করছে শিল্পের স্বার্থান্বেষী ও নৈতিক শূন্যতা।

বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক আন্দোলনের তরুণ প্রজন্ম এখন এই বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। তারা চাইছে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান। হীরা শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের সততা, দায়বদ্ধতা ও ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তির ওপর।

সিয়ান ক্লিনটনের মতে, ইসরায়েলের হীরা বাণিজ্য অব্যাহত রাখা শুধু নৈতিক বিপদ নয়; আর্থিক ও সামাজিক ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক চাপ এবং জনগণের অসন্তোষের মধ্যে হীরা শিল্পকে এখন সত্যিকারের দায়বদ্ধতা ও পরিবর্তনের পথে আসতে হবে।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।