রাজশাহী মহানগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কারও তিনতলা বাড়ি, কারও প্রাইভেটকার থাকলেও কার্ডে তাদের পেশা দেখানো হয়েছে ‘দিনমজুর’। আর এ সুযোগে স্বচ্ছলরা কার্ড পেলেও প্রকৃত দুস্থ, গরিব, বিধবা এবং প্রতিবন্ধীরা বঞ্চিত হয়েছেন।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ফজলুর রহমান তিনতলা বাড়ির মালিক হয়েও টিসিবি কার্ড পেয়েছেন (কার্ড নম্বর ৮১৬৬০০৩০০০১২১)। রাজশাহীর ব্যাংক কলোনির আমির হামজা রোডের দুই নম্বর বাড়িই তার বসতবাড়ি। কার্ডে ‘দিনমজুর’ লেখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন।
একইভাবে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী তাজবুল হকও (কার্ড নম্বর ৮১৬৬০০৩০০০০৮৮) কার্ড পেয়েছেন। তার নিজস্ব বাড়ি ছাড়াও চার ছেলের জন্য আলাদা ৪টি বাড়ি রয়েছে।
এ ছাড়া নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় হোটেল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম (কার্ড নম্বর ৮১৬৬০০৩০০০০৯৯), বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল অ্যাকাডেমির কর্মচারী কাজী নাজমুল কবির (কার্ড নম্বর ৮১৬৬০০৩০০০০৫৯) এবং বিএমডিএ কর্মচারী সারোয়ার হোসেন (কার্ড নম্বর ৮১৬৬০০৩০০০১১৩) কার্ড পেয়েছেন। তাদের কার্ডেও পেশা হিসেবে ‘দিনমজুর’ লেখা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হয়েছেন। যেমন—৫০ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী মাসদার আলী, যিনি খুঁড়িয়ে বাজারে ঝাড়ুদারের কাজ করেন। মাস শেষে মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা আয় হলেও তার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। একইভাবে ৬০ বছরের বৃদ্ধ রংমিস্ত্রি আজাদ আলীকেও কার্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারের পতনের পর স্থানীয় কয়েকজন দলীয় নেতার প্রভাবে নতুন তালিকা করা হয়। সিটি করপোরেশন আগের তালিকা বাতিল করে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে নতুন কমিটি দিয়ে তালিকা প্রণয়ন করে। বর্তমানে ওয়ার্ডটিতে ২ হাজার ৫৩০টি কার্ড থাকলেও তার মধ্যে বহু কার্ড গেছে স্বচ্ছলদের হাতে।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন স্বপন ২৫ জুন, ৮ আগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক এবং সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তিন দফা অভিযোগ দেন। তারা অনিয়মের এ তালিকা বাতিল করে নতুনভাবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তালিকা তৈরির দাবি জানান।
সালমগীর হোসেন বলেন, ‘তালিকা বাতিল করে নিয়ম অনুযায়ী তালিকা করার জন্য আমরা তিনবার আবেদন করেছি। তারপরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে প্রকৃত গরিব, প্রতিবন্ধী ও অসহায় মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। তালিকা বাতিল না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারকে ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।