খুলনায় রেল ভূমির ভাড়া হঠাৎ তিনগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে খুলনার ব্যবসায়ীরা। ভাড়া বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য এবং বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেছেন তারা। ভাড়া বাড়লে হাজারো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে, কর্মহীন হবে অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী, আর খুলনার অর্থনীতিতে নামবে মারাত্মক সংকট।
এমন অবস্থায় ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অযৌক্তিক ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ও রেল উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা। এর মধ্যে ভাড়া প্রত্যাহার না হলে রেল ভবন ঘেরাও কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ১৮টি ব্যবসায়ী সংগঠনের জোট রেল ভূমি ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ।
এ সময় ব্যবসায়ীরা বলেন, রেল ভূমির প্রতি বর্গফুট ৭০ টাকা ভাড়া এক লাফে ২০০ করা হয়েছে। ভ্যাট ও আয়কর যোগ করে যা ২৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে যে দোকানের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা ছিল, তা এখন এক লাখ ৭০ হাজার হয়েছে। এত ভাড়া পরিশোধের সক্ষমতা তাদের নেই। এই ভাড়া কার্যকর হলে সবাই লোকসানের মুখে ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন রেল ভূমি ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব আবু সাঈদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে রেল ভূমির প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। এরপর ভাড়া বাড়িয়ে ৫০ টাকা এবং ২০২১ সালে ৭০ টাকা করা হয়। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে সেই ভাড়া বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা করা হয়েছে। অথচ ভৈরব নদের তীরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ব্যবসায়ীদের কাছে ভূমি ভাড়া দেয়। সে ভূমির ভাড়া প্রতি বর্গফুট ৩ টাকা। জেলা প্রশাসনও ব্যবসায়ীদের কাছে জমি ইজারা বা ভাড়া দেন। তাদের ভাড়া প্রতি বর্গফুট ৩ টাকা ৮৮ পয়সা।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের পতিত ডোবা-নালা ভরাট করে ব্যবহার উপযোগী করে ব্যবসায়ীরা সেখানে ব্যবসা করছেন। ভূমির ওপর তৈরি স্থাপনাও তাদের নিজ খরচে নির্মাণ করা। শুধু মাত্র ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েই রেল প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা ভাড়া ধার্য করেছে। অথচ খুলনা শহরের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত সুসজ্জিত ভবনের ভাড়া সর্বোচ্চ প্রতি বর্গফুট ৫০ টাকা।
তারা জানান, খুলনার কদমতলা, বড়বাজার, স্টেশন রোড, ডাকবাংলো মোড়, রেলওয়ে হাসপাতাল রোডসহ আশপাশের রেলের জমি ভাড়া নিয়ে প্রায় ৫/৬ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে প্রায় ৩০ হাজার কর্মচারী। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের দুরবস্থা চলছে। এই ভাড়া দিতে বাধ্য হলে সব ব্যবসায়ীই লোকসানের মুখে পড়বেন। অনেকেই দোকানপাট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। এতে হাজার হাজার মানুষ বেকার হবে। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজি আটকে যাবে। সব মিলিয়ে খুলনার অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। সংবাদ সম্মেলন থেকে রেলের অযৌক্তিক ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— পরিষদের আহ্বায়ক ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শরীফ আতিয়ার রহমান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ও চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মুনীর আহমেদ, সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ ও কাঁচাপাকা আড়তদার সমিতির সভাপতি আবদুর রব মাস্টার, খুলনা বড় বাজার সমন্বয় ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম মাসুমসহ ১৮টি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।