নীলফামারীর ডিমলায় সীমান্তবর্তী তিস্তা নদীর ভয়াবহ বন্যায় মানুষ, গবাদি পশু ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মালপত্র উদ্ধারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া কোটি টাকারও বেশি মূল্যের দুটি উদ্ধারকারী নৌকা (রেসকিউ বোট) এখন ধ্বংসপ্রায়। সরকারি নথি অনুযায়ী প্রতিবছর এসব নৌকার রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি ও রং করার জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে; কিন্তু বাস্তবে কোনো কার্যক্রমই হয়নি।
জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া নৌকা দুটির একটি রাখা হয় খগাখরিবাড়ি ইউনিয়নের পাগলপাড়া এলাকায় এবং অন্যটি ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ডনের সাইড ঘাট এলাকায়। তবে দীর্ঘদিনের অবহেলা, অযত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোটি টাকার সরকারি নৌকাগুলো এখন অকোজে হয়ে পড়েছে। নৌকাগুলো মেরামতের জন্য অর্থ উত্তোলন হলেও বাস্তবে কোনো উন্নয়ন হয়নি। অথচ নৌকার ক্রু ও সহকারী মিলে তিনজন নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, যার পরিমাণ বছরে কয়েক লাখ টাকা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে একটি এবং ২০২১ সালে আরেকটি উদ্ধারকারী নৌকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি নৌকার দাম এক কোটি টাকারও বেশি। নৌযানের দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট, প্রস্থ ১২.৫ ফুট এবং ধারণক্ষমতা ৮০ জন যাত্রী। এগুলো ঘণ্টায় ৭ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। উদ্দেশ্য ছিল—বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবন রক্ষা ও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া।
কিন্তু বছরজুড়ে নৌকাগুলো অকেজো অবস্থায় নদীর তীরে পড়ে থাকে। রোদ-বৃষ্টি ও অবহেলায় লোহার গায়ে মরিচা ধরেছে, জানালা ও কেবিন ভেঙে গেছে, ইঞ্জিন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। একসময় যে নৌকাগুলো দিয়ে দুর্যোগকালে মানুষকে উদ্ধার করা হতো, সেগুলো এখন ভাঙাচোরা ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৌকার ক্রু জানান, ২০২১ সাল থেকে নৌকাটি এখানে রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত সামান্য মেরামত বা রং করা তো দূরের কথা, এক লিটার মবিলও সরবরাহ করা হয়নি। এমনকি ১০ মাস ধরে তাদের বেতনও বন্ধ রয়েছে।
পাগলপাড়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘গত দু-তিন বছরে নৌকা দুটির রক্ষণাবেক্ষণ ও ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে; কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি। সব টাকাই অজানা খাতে চলে গেছে, সম্ভবত কর্মকর্তাদের পকেটে।’
তিস্তাপাড়ের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, বন্যার সময় আমরা ভেবেছিলাম নৌকাগুলো দিয়ে মানুষকে নিরাপদে সরানো হবে। কিন্তু এখন এগুলো অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, সরকার মানুষের জীবন বাঁচাতে নৌযান দিয়েছে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় এগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে। আমরা একাধিকবার বিষয়টি জানিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কোটি টাকার সরকারি সম্পদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে।
ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আশরাফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, নৌকাগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার হচ্ছে না, এটা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। খুব শিগগিরই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নৌকাগুলো সচল করার উদ্যোগ নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, নৌকাগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো অচল অবস্থায় থাকা দুঃখজনক। আমি নিজে বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করব।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মনোয়ারুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এ খাতে কোনো নতুন বরাদ্দ আসেনি। যেহেতু এটি একটি সরকারি সম্পদ, তাই রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আশা করি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।