বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো হরতাল চলছে। এরই মধ্যে আগামী সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে, বেঞ্চ পেতে, বাস বেঁধে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করছেন হরতালের সমর্থনকারীরা।
সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির দাবি, জেলার বিভিন্ন সড়কের অন্তত ১৩৪টি স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা। যার ফলে বাগেরহাট জেলা কার্যত অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোংলা-খুলনা, মোংলা-ঢাকা, খুলনা-বরিশাল-পটুয়াখালী, খুলনা-কাটাখালী-ঢাকা, বাগেরহাট-মাওয়া-ঢাকা ও শরণখোলা-সাইনবোর্ড-ঢাকা এই ৬টি মহাসড়কের উপর দিয়ে চলাচলকারী ৪৮টি দূরপাল্লাসহ আন্তঃজেলা রুটে দ্বিতীয় দিনেও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এসব মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে।
এতে মোংলা সমুদ্রবন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য সড়কপথে পরিবহন করা যায়নি। বাগেরহাট বিসিক, মোংলা ইপিজেড, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ জেলার সব শিল্পাঞ্চলের কলকারখানায় কোনো কাজ হয়নি। দ্বিতীয় দিনেও মোংলা বন্দরসহ পুরো বাগেরহাট জেলা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।
জানা গেছে, হরতালে জেলা শহরসহ উপজেলাগুলোয় দোকানপাট, ব্যবসা, ব্যাংক, বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বন্ধ ছিল। হরতালকারীরা জেলা, উপজেলার নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে ঢুকতে পারেনি। মোরেলগঞ্জে পানগুছি ও মোংলা নদীতে সড়ক বিভাগের ফেরি চলাচলও বন্ধ আছে।
এদিকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি একই দাবিতে নতুন করে জেলাব্যাপী ৩ দিনের হরতালসহ ৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহ্বায়ক জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ৬ দিনব্যাপী নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শুক্রবার ও শনিবার দু-দিন জেলার সব মসজিদে দোয়া, রোববার জেলা-উপজেলার সব সরকারি অফিস-আদালত ঘেরাও, সোম, মঙ্গল ও বুধবার তিন দিন পূর্ণদিবস হরতাল। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে মেনে না নিলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতারা।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি খসড়া প্রস্তাবে বাগেরহাট জেলার চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি রাখার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলো নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের দাবিকে উপেক্ষা করে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত গেজেট বাগেরহাটে একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন রাখাসহ নিজেদের খসড়া প্রস্তাবে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে আসনের সীমানা নির্ধারণ করে। ইসির এই সিদ্ধান্তে আবারও ফুঁসে ওঠে বাগেরহাটের রাজনৈতিক দলসহ আমজনতা।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ (বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা)ও বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)। দীর্ঘদিন থেকে ৪টি আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। তখনকার সীমানা—বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা), বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।