দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘটেছে এক ‘ভৌতিক’ কাণ্ড। একজন চিকিৎসক হাসপাতালে নেই, অথচ হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর রয়েছে!
এ নিয়ে জনে জনে প্রশ্ন করেও কোনো সদুত্তর মেলেনি। তবে জেলা সিভিল সার্জন জানালেন, এর আগেও ওই চিকিৎসককে হাসপাতালে না পেয়ে শোকজ করা হয়েছিল।
অভিযুক্ত ওই চিকিৎসক হলেন সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডা. সুমনা আফরিন।
চিকিৎসকের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ সেবাপ্রত্যাশী ও এলাকাবাসী। স্থানীয় সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, ওই চিকিৎসককে প্রায়ই হাসপাতালে পান না তারা। বিশেষ করে বৃহস্পতি ও শনিবার। এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত এক মাস প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে এর সত্যতা মিলেছে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, তিনি উপস্থিত না থাকলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে তার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দাঁতের চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন বহু রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেও চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে হতাশ হয়ে ফেরেন তারা। অনেকেই বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিক বা শহরের চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিনা বেগমের মেয়ে দাঁতের সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু দুই দিন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসককে পাননি তিনি। এ ঘটনায় কষ্ট পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের দাঁতের ব্যথা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়েছিলাম, ডাক্তার পাইনি। আবার শনিবার গিয়েও ডাক্তার ছিল না। বাচ্চার কষ্ট হচ্ছে জন্য নিয়ে গেছি।’
অনুপস্থিত থাকার পরও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর রয়েছে উল্লেখ করে এই নারী বলেন, ‘এটা দেখে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। এটা তো অন্যায়।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. সুমনা আফরিন প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার অফিসিয়াল ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কর্তৃপক্ষ যদি আমাকে ডেকে বলে, তখন আমি কথা বলব। বর্তমানে আমার কোনো সহকারী নেই, এতে আমি সমস্যায় পড়ি। তবে নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যদি সিস্টেম চালু করা হয়, আমি করব।’ তবে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘তার (ডা. সুমনা আফরিন) দুটি সন্তান আছে। তিনি ময়মনসিংহ থেকে এসে এখানে ডিউটি করেন। মাঝে মাঝে তাকে ক্যাজুয়াল লিভ দেওয়া হয়।’ হাজিরা খাতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি খাতা দেখাতে গড়িমসি করেন এবং মন্তব্য করতে অসম্মতি জানান।
তবে দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ ফেরদৌস কালবেলাকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে অবগত না করে অনুপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। এর আগেও আমি তাকে (ডা. সুমনা আফরিন) না পেয়ে শোকজ করেছি। প্রমাণ পাওয়া গেলে আবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালু করা হবে।’