সারাদেশ

ওসি-এসআইয়ের অর্থ আত্মসাতের অডিও ফাঁস

ওসি-এসআইয়ের অর্থ আত্মসাতের অডিও ফাঁস


ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় নকল পুতুল-মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে আটকের পর মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনার ৩ দিন পর এক পুলিশ কর্মকর্তার অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

অডিও ফাঁসের পর জানা গেছে, রাণীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক ও এসআই শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে আটক ব্যক্তিদের কাছে থাকা ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করাসহ ক্রেতাদের প্রতারক বানিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশকে তথ্য সরবরাহকারী আকাশ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলামের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওতে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।

পুলিশের ফাঁস হওয়া অডিওটি গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অডিও ফাঁসের পর থেকে ব্যাপক সমালোচনার চলছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আইনের কর্তা ব্যক্তিদের এমন কার্যক্রমে হতাশ সবাই। ফলে আইনের প্রতি আস্থা হারানোর শঙ্কা রয়েছে।

অডিও কলে ওই ঘটনার তথ্য সরবরাহকারী আকাশ ও রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়।
আকাশ বলেন, ‘আমি আগে থেকেই জানতাম, যাদের আটক করে জেলে দিয়েছেন তারা ক্রেতা হিসেবে না বুঝে নকল সোনা কিনতে আসছিল। তাদের কোনো দোষ নেই। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিল। আমার সঙ্গে আপনাদের (পুলিশের সঙ্গে) কন্ট্রাক হয় তাদের ধরিয়ে দিলে লাখে ত্রিশ হাজার টাকা দেবেন। কেন দিলেন না।’

পুলিশের এসআই শহিদুল ইসলাম উত্তরে বলেন, ‘স্যার (ওসি) আমাকে নম্বর দিয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। আপনি না আসলে লোক পাঠাবেন তাও পাঠাননি। কাউকে পাঠান।’

আকাশ, ‘আপনারা কনফার্ম না করলে বা না ডাকলে কীভাবে পাঠাবো। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন আপনারা।’

এসআই শহিদুল, ‘না, তাদের কাছে এত টাকা ছিল না। পাওয়া গেছে ৩ লাখ। ওই টাকাও তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। তখন খুশি হয়ে স্যারকে ৫০ হাজার টাকা দেয় তারা।’

আকাশ, ‘তারা কেউ টাকা ফেরত পায়নি। তারা সবাই তো জেলে। আর কাকে টাকা ফেরত দিলেন তা আমি দেখবো কেন। সোর্সের সঙ্গে যা কন্ট্রাক হয়েছে তা দিয়ে দেবেন। আর তারা তো নিরপরাধ মানুষ ছিল। তারা কিনতে আসছিল।’

এসআই শহিদুল, ‘তারা সত্যি নির্দোষ ছিল। বড় স্যারও বলেছিল তাদের মামলা দেওয়া হলো! তবে ওসি স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কী করার। আর তাদের যে টাকা ফেরত দিয়েছে ওখানে সাংবাদিকরাও ছিল। আমিও আগে থেকে জানতাম এই ব্যবসা চলে সেখানে। যাক আপনি লোক পাঠান।’

এর বাইরেও অর্থ লেনদেনসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায় অডিওতে।

তবে অডিও পোস্টের কমেন্টে নেটিজেনরা লেখেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও তার রেখে যাওয়া দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে বিভিন্ন থানায়। তারা ৫ আগস্টের পর থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষদের জিম্মি করছে। ১৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটি ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের মাধ্যমে স্পষ্ট, পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছিল যারা তারা নির্দোষ। তাদের ক্রেতা থেকে প্রতারক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এর পেছনে রাণীশংকৈল থানার ওসিসহ পুলিশের কিছু পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। অবিলম্বে ওই থানার ওসি আরশেদুল হকসহ জড়িতদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতনদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।

থানার এসআই শহিদুল ইসলাম কল রেকর্ডের কথা স্বীকার করে বলেন, ওসি সাহেবের নির্দেশেই আকাশের সঙ্গে কথা হয়। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।

রাণীশংকৈল প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমি যখন তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলি তখন ওসির রুমে টাকার বিষয়ে কোনো আলাপ হয়নি, কিংবা জানানো হয়নি। অডিওতে সাংবাদিকদের কথা, আমার কথা শুনে অবাক হয়েছি। অনিয়মে সংবাদকর্মীরা কাউকে ছাড় দেবে না।

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক কালবেলাকে বলেন, যে সোর্স সে এখানে সুবিধা গ্রহণ করতে চাচ্ছিল। আমরা তাকে ধরার জন্যই এই আলোচনাটা করি— যে রেকর্ডিংটা পরে ভাইরাল হয়ে যায়। তবে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যারা দোষী তাদের আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার সার্কেল (এসপি) শ্নেহাষীশ কুমার দাস কালবেলাকে জানান, বিষয়টি অবগত হয়েছি। তদন্ত করে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, ঘটনার বিষয়টি নজরে এসেছে। তদন্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত থাকলে ছাড় নয়, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে ওই উপজেলায় নকল সোনার পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সোনালি রঙের মূর্তি, পুরোনো নকশার রুপার মুদ্রা ও নগদ টাকাসহ আসামিদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।