সারাদেশ

কক্সবাজারে অপহৃত ৬ শ্রমিক পাহাড় থেকে উদ্ধার

কক্সবাজারে অপহৃত ৬ শ্রমিক পাহাড় থেকে উদ্ধার


কক্সবাজারে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সেই ছয়জনকে টেকনাফের পাহাড় থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে টেকনাফের রাজারছড়া পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।

তারা হলেন- জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) ও মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২)।

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, তাদের সবার ফোন এতদিন বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নিখোঁজ শ্রমিকদের মধ্যে দুজনের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে। তাদের অবস্থান টেকনাফের রাজারছড়া এলাকা বলে শনাক্ত করা হয়। এরপর অপহৃতদের উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ।

অপহৃতদের পরিবারের ভাষ্যমতে, গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের পাঁচ তরুণসহ ছয়জন কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছার পর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারে চরম দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। অপহৃত সবাই রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।

অপহৃত রশিদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, রশিদ কয়েক বছর থেকে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতো আমার ভাই। বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল তার। এবার কক্সবাজার যাওয়ার পর থেকে রশিদসহ সঙ্গে থাকা সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম, কারণ টেকনাফ অপহরণ এবং মানবপাচারপ্রবণ এলাকা।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছি। আমিও চেষ্টা করছি তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। তাদের লোকেশন যে এলাকায় পাওয়া গেছে সেটি ভয়ংকর এলাকা। কেননা এর আগেও থ্রি মার্ডার সেখানে (রাজারছড়া) হয়েছিল।

জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, কক্সবাজারের কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া আমার এলাকার ছয় যুবক নিখোঁজ হন। তারা এর আগেও চট্রগ্রাম-কক্সবাজারের কাজ করতে গিয়েছিলেন। আমরা পরিবারকে সহায়তা করেছি। তাদের লোকেশন টেকনাফের রাজারছড়া গ্রামে পাওয়া গেছে। তাই সেখানকার থানা পুলিশকে অবহিত করেছি।

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে কাজের সন্ধানে আসা ছয় নির্মাণশ্রমিক টেকনাফের রাজারছড়া এসে অপহৃত হয়। বিষয়টি টেকনাফ থানা পুলিশ অবগত হওয়ার পর অপরাধীদের অভয়ারণ্য রাজারছড়ার পাহাড়ের পাদদেশে রাত সাড়ে ৮টায় রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালায়। এ সময় রাজারছড়ার পাহাড়ের ভেতর থেকে অক্ষত অবস্থায় ছয় নির্মাণশ্রমিককে উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযান টের পেয়ে অপহরণকারী চক্র পালিয়ে যায়।

এদিকে টেকনাফের রাজারছড়া এলাকাটি হচ্ছে মানবপাচার ও অপহরণকারীদের গোপন আস্তানা। আটদিন ধরে নিখোঁজ সিলেটি শ্রমিকরা মানবপাচার ও অপহরণকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে। ইতোমধ্যে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গা অস্ত্রধারীদের নিয়ে গড়ে উঠা অপহরণকারী চক্রটি বিগত ৫ মাসে প্রায় ৫০জনকে মুক্তিপণের আশায় অপহরণ করে। এদের মধ্যে মুক্তিপণ না পেয়ে অনেকে খুন হন। অপহরণের শিকার বেশির ভাগই লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাঁচে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল কক্সবাজার জেলায় কাজের সন্ধানে এসে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার একই গ্রামের ছয়জন শ্রমিক নিখোঁজ হয়। তারা পেশায় সবাই রাজমিস্ত্রী। আট দিন ধরে নিখোঁজ থাকা শ্রমিকরা সবাই এদিন কাজের সন্ধানে জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য বের হয়েছিলেন।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।