সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন ১০ দিন কারাবাসের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১০ দিন কারাবন্দি থাকেন সাংবাদিক নির্যাতনে অভিযুক্ত সাবেক এই ডিসি।
কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেলার এজি মাহমুদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সাংবাদিক আরিফুলের করা মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক এই ডিসি গত ৩ আগস্ট হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
এরপর সুলতানা পারভীন গত ২১ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত ২ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। সেদিন শুনানি শেষে আদালত আসামি সুলতানা পারভীনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্ট আসামির ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম কারাগারে জামিন আদেশের কপি পৌঁছালে এদিন সন্ধ্যায় কারামুক্ত হন সুলতানা পারভীন।
কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেলার এ জি মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রাম কারাগার থেকে বের হয়ে যান।
কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে (সুলতানা সরোবর) নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফকে তার বসতবাড়ি ও বসতঘরের গেট ভেঙে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার উদ্দেশে জেলা শহরের পূর্বে ধরলা নদীর তীরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ফিরিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়।
এরপর মাদক রাখার অভিযোগ দেখিয়ে মধ্যরাতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে সারাদেশে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ শুরু হলে একদিন পর সাংবাদিক আরিফকে জামিন দেয় জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
জামিনে মুক্তি পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন ও তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অজ্ঞাত ৩০/৩৫ জনকে আসামি করে এজাহার দায়ের করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। চার্জশিটে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এসএম রাহাতুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।