পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে চট্টগ্রামে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জমায়েত জশনে জুলুছ আগামী ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। জুলস উপলক্ষে গত তিন সপ্তাহ আগে থেকেই নগরজুড়ে চলছে সাজসজ্জা।
চট্টগ্রাম নগরের জামেয়া মাদ্রাসার ময়দানসহ কাজির দেউরি, মুরাদপুর, আন্দরকিল্লাহ, ২নং গেইট, ওয়াসার মোড়, অক্সিজেন মোড়, আগ্রাবাদসহ প্রতিটি মোড় সাজানো হচ্ছে গেট, তোরণ ও ব্যানার দিয়ে। ফলে অন্যরকম রূপ পাচ্ছে পুরো চট্টগ্রাম নগর। এছাড়াও জেলা বিভিন্ন উপজেলায়ও সাজানো হয়েছে ভিন্নভাবে।
জানা যায়, আনজুমানে রহমানিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় আগামী ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে জশনে জুলুস। এবার জুলুসে নেতৃত্ব দিবেন পীরে বাঙ্গাল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ ছাবের শাহ্ (মা.জি.আ)। সঙ্গে থাকবেন সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ এবং সাহেবজাদা সৈয়দ মেহমুদ আহমদ শাহ।
জুলুস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, মাদ্রাসার মাঠ, জুলুছ মাঠ, নগরের মুরাদপুর, বহদ্দার হাট, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, কাজির দেউড়ি মোড়, নিউমার্কেট, ২নং গেট, জিইসি মোড়সহ আশপাশের এলাকা সাজানে হচ্ছে। তাছাড়া নগরের বড় বড় মোড়ে স্থাপন করা হচ্ছে মসজিদের নববীর (সা.) মিনারের আদলে বড় আকারের দৃষ্টিনন্দন সবুজ মিনার।
আনজুমান ট্রাস্ট’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মনজুর আলম (মনজু) কালবেলাকে বলেন, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে জশনে জুলুছ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে গত এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি মিটিং এবং আগে থেকেই সাজ সজ্জার নানা প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আশা করি, সবার সার্বিক সহযোগিতায় এবারও অতীতের মত সুন্দর, সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে জুলশ সম্পন্ন হবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, এবারের জুলুছের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো- এবার আনজুমান ট্রাস্টের শতবর্ষ পূর্তি, আনজুমানের নিয়মিত মাসিক প্রকাশনা তরজুমানের সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন। এ দুটি বৈশিষ্ট্যকে সামনে রেখে আমাদের অনেক কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। আমরা আশা করব, জুলুছসহ প্রতিটি কার্যক্রমে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতিকে সুন্দর একটি জুলুশ উপহার দিতে সক্ষম হব। একই কথা বললেন সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনও।
আনজুমান সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল (১৩৯৪ হিজরি) দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের সাজ্জানশীন আল্লামা হাফেজ সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) এর নির্দেশনা ও রূপরেখায় আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নূর মুহাম্মদ আল কাদেরী (রহ.) এর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম নগরের কোরবানীগঞ্জের বলুয়ারদিঘি পাড় খানকাহ্-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে প্রথম জুলুশ বের হয়েছিল। জুলুছ বলুয়ারদিঘি খানেকাহ থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে শেষ হয়।
১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এই জুলুসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জুলুসের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা হাফেজ সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)। ১৯৮৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জশনে জুলুসের নেতৃত্ব দেন তারই ছেলে পীরে তরিক্বত সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মা.জি.আ.)। তবে গত তিন বছর ধরে বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে তিনি চট্টগ্রামে আসতে পারছেন না। ফলে তার ছোট ভাই সৈয়দ মুহাম্মদ সাবের শাহ (মা.জি.আ.) এবার ৫৪ তম জুলুছের নেতৃত্ব দেবেন।
অন্যদিকে, বলুয়ারদিঘি খানেকাহ থেকে শুরু হওয়া সেই জশনে জুলুস এখন কালের পরিক্রমায় ঢাকাসহ সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়ালের দিন চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, পার্বত্যাঞ্চল, গত তিন যুগ ধরে এ জশনে জুলুসের পরিধি ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে বলে জানা যায়।