সারাদেশ

জিলাপিকাণ্ডে প্রত্যাহার হওয়া ওসিকে ফেরাতে বিএনপির মিছিল

জিলাপিকাণ্ডে প্রত্যাহার হওয়া ওসিকে ফেরাতে বিএনপির মিছিল


জিলাপিকাণ্ডে প্রত্যাহার হওয়া কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেনকে ফেরাতে প্রতিবাদ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার ইটনা বাজারে এই প্রতিবাদ মিছিল হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে বাড়িবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হবি মিয়া বলেন, ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে। সমন্বয়ক দাবি করে আওয়ামী লীগের লোক এই কাজটি করেছে।

মিছিলে যোগ দিয়ে জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মারুফুল আলম খান বলেন, একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। ইটনায় কোনো সমন্বয়ক বলে শব্দ ছিল না। ইটনায় যতটুকু আন্দোলন হয়েছে তা শুধু জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে হয়েছে। ভুয়া সমন্বয়ক সেজে ইটনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। একজন দক্ষ ন্যায় পরায়ন মানবপ্রেমী ওসিকে বদলির মাধ্যমে ফাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমন্বয়ক সেজে লুটপাট করতেছে। আমরা ওই সমন্বয়ক দাবিকারীর বিচার চাই।

যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, অবৈধ সমন্বয়কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। ইটনায় কোনো সমন্বয়ক ছিল না। এরা ফ্যাসিবাদের দালাল। ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে। সাবেক ওসির প্রত্যাহার মানি না।

ইটনা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজাদুর রহমান সুজন জানান, আমরা খুব নির্দিষ্টভাবে বুঝতে পারছি স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। চক্রান্তকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছি আপনারা সরে দাঁড়ান। আপনারা জানেন সাবেক ওসি মনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করেছিলেন। ওনি ওনার দায়িত্ব পালন করেছেন। ভুয়া সমন্বয়ক রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ওসিকে বদলি করিয়েছে।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান স্বপন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের চক্রান্তে চৌকস অফিসার ওসি মনোয়ার হোসেনকে বদলি করা হয়েছে। নিয়মমাফিক বদলি হলে আপত্তি ছিল না তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আজকে আমাদের বিক্ষোভ।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম কামাল হোসেন বলেন, এই যে সমন্বয়ক শান্ত আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তারা আওয়ামী লীগের সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেমন যুদ্ধ শেষে রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিল তেমনি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় সে সমন্বয়ক হয়ে গেছে। সমন্বয়ক হয়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের সেইভ করার জন্য আজকে চৌকস অফিসারের বিরুদ্ধে এমনটা করেছে। বাদলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিল আওয়ামী লীগের। তাকে দুর্নীতির জন্য যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে তখন সমন্বয়ক দাবি করা ব্যক্তি সোচ্চার হয়ে সুকৌশলে ওই ওসির বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ সৃষ্টি করেছে এবং তার সাথে আওয়ামী লীগের দোসররা এক হয়ে তাকে (ওসি) বদলি করা হয়েছে। একজন চৌকস অফিসারকে এভাবে বদলি করায় বিক্ষোভ করা হয়েছে। আমরা ওই ওসিকে পুনর্বহাল চাই।

উল্লেখ্য, টেন্ডারে পাওয়া কাজের টাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার কাছে জিলাপি খেতে চেয়েছেন কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়।

ওই কথোপকথনে ওসি মনোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘সেফটি সিকিউরিটি দিলামতো সারা জীবন। তোমরা যে ১৮ লক্ষ টাকার কাজ করে ১০ লক্ষ টাকা লাভ করলা, ১০ টাকার জিলাপি কিনে তো পাবলিকেরে খাওয়ালে না। খাইয়া যে একটু দোয়া কইরা দেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। তোমার জায়গায় আমি হইলে সুদের উপরে টাকা আইনা আগে জিলাপি খাওয়াইতাম। দোয়াডা হইলো সবার আগে। পরেতো বিল পামু, তাই না?’

একপর্যায়ে ওসি আরও বলেন, ‘ঠিক আছে তাহলে, জিলাপির অপেক্ষায় রইলাম নাকি? না না, জিলাপি হইলেই হইবো। এক প্যাচ আধা প্যাচ (এক পিস আধা পিস) জিলাপি দিলে হইবো। বিভিন্ন পারপাসে হলে পাবলিক খাইলো আর কী, বোঝ না? এসময় ভুক্তভোগী ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিল-টিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেখবো নে’। তার এ কথার উত্তরে ওসি বলেন, ‘ঠিক আছে’।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওসির সঙ্গে মুঠোফোনে ওই কথোপকথনে অপর প্রান্তে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইটনা উপজেলার সংগঠক আফজাল হুসাইন ওরফে শান্ত। তিনি ইটনা সদর ইউনিয়নের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ করেছেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রনেতা আফজাল হুসাইন শান্ত বলেন, ‘আমি ইটনা উপজেলার বলদা হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪৮০ মিটার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ পাই টেন্ডারের মাধ্যমে। কাজ শেষ হওয়ার পর থানায় গেলে তিনি (ওসি) জিলাপি খেতে টাকা চাইতেন। তখন রেকর্ড করতে পারিনি। পরে ওসির সঙ্গে ফোনে আমার কথা হলে তিনি আমার কাছে ফসল রক্ষা বাঁধ করে যে লাভ হয়েছে, সেখান থেকে জিলাপি খেতে চান।’

এই ঘটনার পর জিলাপি খেতে চাওয়ায় পুলিশ লাইনে সংযুক্ত হলেন কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানা গেছে।

অফিস আদেশে জানানো হয়, কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেনকে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই আদেশে মো. জাফর ইকবালকে ইটনা থানায় নতুন ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।