পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহাসিক ৫৪তম জশনে জুলুস। শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অবস্থিত খানকাহ শরিফ থেকে যাত্রা শুরু হওয়া এ শোভাযাত্রা মুহূর্তের মধ্যেই রূপ নেয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশে।
ভোর থেকেই চারদিক থেকে ছুটে আসতে থাকে দলে দলে মানুষ। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কারও হাতে আনজুমানের সবুজ পতাকা, আবার কারও হাতে কালেমার পতাকা। একদিকে দরুদ-সালাম আরেকদিকে স্লোগান, সবকিছু মিলিয়ে চট্টগ্রামের আকাশ-বাতাস ভরে ওঠে নবীপ্রেমের অনন্য আবেগে।
সকাল গড়াতেই মুরাদপুর, জিইসি, ২নং গেইট, ষোলশহর ও বহদ্দারহাটে উপচে পড়ে মুসল্লিদের ঢল। নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে ছিল শুধু মানুষের স্রোত। এবারের জুলুসে উপস্থিতি ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। লাখো নয়, বলা চলে অগণিত মানুষের পদচারণায় নগরী রূপ নেয় ঈমান ও ভ্রাতৃত্বের মহোৎসবে। আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মাদজাল্লাহু আলি) নেতৃত্ব দেন এ জুলুসের। তার গাড়িবহর এক নজর দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা।
হুজুরকে ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাসে মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রতিটি মোড়, প্রতিটি গলি হয়ে ওঠে একেকটি নবীপ্রেমের মিলনমেলা।
পথে পথে ছিল সেবামূলক আয়োজন। প্রতিটি মোড়ে পানি, শরবত, তাবাররুক আর খাবার নিয়ে হাজির ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। ছোট্ট শিশুরা হাতে গ্লাস নিয়ে আগত মুসল্লিদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। ভক্তদের এই আন্তরিকতায় অতিথিপরায়ণতার এক দৃষ্টান্ত তৈরি হয়। আলোকসজ্জায় ঝলমল করে উঠে শহরের প্রতিটি সড়ক, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। মসজিদ-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম নগরী রূপ নেয় আলোর শহরে, নবীপ্রেমের নগরীতে।
আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ বলেন, ‘জশনে জুলুস হচ্ছে নবীপ্রেমের সোনালী প্রদীপ। লাখো মানুষের এই অংশগ্রহণ প্রমাণ করে মুসলমানরা নবীজির (সা.) ভালোবাসায় সর্বদা ঐক্যবদ্ধ। ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া এই জুলুস আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম আজ ঈমান, ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার মহোৎসবে রূপ নিয়েছে।’
অতিথি মুসল্লিদের অনেকে জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও তারা এসেছেন শুধু নবীজির (সা.) শানে মিলিত হতে।
একজন ভক্ত বলেন, ‘এখানে এসে মনে হয়, পুরো পৃথিবী একসাথে নবীপ্রেমে ভরে গেছে।’
অন্যজন বলেন, ‘এ সমাবেশে অংশ নেওয়া জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
এদিকে আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ৫৪ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ জুলুস। প্রতিবছর লাখো ভক্ত-অনুরাগীর সমাগমে এটি এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় শোভাযাত্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। নবীপ্রেমের এ মিলনমেলা শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুন্নি মুসলমানদের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
সকাল থেকে শুরু হওয়া এ জুলুস দুপুর গড়িয়েও চলমান। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক অতিক্রম করছে ধীরে ধীরে। পথে পথে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে চারদিক, মানুষের ঢলে প্রতিটি মোড় ভরে উঠছে। চট্টগ্রামের আকাশে এখন একটাই সুর—
‘নবীপ্রেমই আমাদের শক্তি, নবীপ্রেমেই আমাদের ঐক্য।’