নীলফামারীর ডিমলায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, খাবারের মান অত্যন্ত খারাপ এবং পরিমাণেও কম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইজিপি টেন্ডারে চার নম্বরে থাকা সত্ত্বেও শুধু স্বাস্থ্য কর্মকর্তার যোগসাজশে মেসার্স শিরিন ট্রেডার্স কাজটি বাগিয়ে নিয়েছে।
জানা গেছে, হাসপাতালে প্রতিদিন সকালে রোগীদের দুটি পাউরুটি, একটি সিদ্ধ ডিম ও এক চামচ চিনি দেওয়া হয়। দুপুরে দেওয়া হয় ৭ দশমিক ৫০ গ্রাম ওজনের সিলভারকার্প মাছ, ১০০ গ্রাম মোটা চালের ভাত, ডাল ও ভাজি মেশানো তরকারি। রাতে প্রায়ই দুপুরের অবশিষ্ট খাবার সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। অথচ টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী, সপ্তাহে চার দিন মাছ এবং দুই দিন মাংস দেওয়ার কথা।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য ১৭৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যেখানে সকালে দুটি পাউরুটি, দুটি সিদ্ধ ডিম, একটি কলা ও ২০ গ্রাম চিনি; দুপুরে ও রাতে ১০০ গ্রাম মাছ, ২০০ গ্রাম ভাত, ২০ গ্রাম ডাল এবং পরিমাণ মতো সবজি দেওয়ার কথা।
তবে ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরবরাহ করা হচ্ছে সিলভারকার্প, বার্মিজ রুই, তেলাপিয়া মাছ এবং মোটা চালের ভাত। অনেক সময় পচা ও বাসি তরকারি এবং পরিমাণেও কম খাবার পরিবেশন করা হয়।
উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গারহাট এলাকার বকুল নামের এক রোগী বলেন, চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। পাতলা ডাল দেয়। মাছ-মাংসে ঝাল বা মসলার কোনো স্বাদ নেই। আর যে ভাত দেয়, তা গলা দিয়ে নামে না।
খগাখরিবাড়ী ইউনিয়নের টুনিরহাট এলাকার মহিলা ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন নুরজাহান বেগম বলেন, খাবারে কোনো স্বাদ বা ঘ্রাণ নেই। মসলার চিহ্নও নেই। দুপুরের খাবার কোনোমতে খাওয়া গেলেও রাতের খাবার মুখে তোলা যায় না।
বালাপাড়া সুন্দরখাতা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মুনতাহানা বেগম মহিলা ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে শুয়ে বলেন, যে ভাত দেয় তাতে পেট ভরে না। ক্ষুধা নিয়েই থাকতে হয়। চিকিৎসা করাতে এসেছি, টাকা তো আর নেই যে বাইরে থেকে কিনে খাব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, খাবার খাওয়ার অযোগ্য হওয়ায় বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়াও, খাবার সরবরাহও দেরিতে হচ্ছে। প্রায়ই সকাল ৮টার পরিবর্তে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে খাবার আসে। এমনকি অনেক সময় খাবারের মানও ঠিক থাকে না।
উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশ পুকুর গ্রামের আব্দুল জলিল মণ্ডল বলেন, সকালে দুটি বাসি পাউরুটি আর একটু চিনি দিয়েছিল, যা খাওয়া যায়নি। দুপুরে অল্প ভাত আর আধ পিস মাছ দিয়েছিল, সঙ্গে তরকারিও ছিল। মাছ অপরিষ্কার থাকায় ফেলে দিয়েছি। রাতের খাবার মুখে দেওয়া যায় না। আর দিলেও তা পচা-গন্ধযুক্ত ও কাঁকর মেশানো থাকে, যা খাওয়ার অযোগ্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাগজে-কলমে মেসার্স শিরিন ট্রেডার্স থাকলেও মূল ক্ষমতা ডা. মো. রাশেদুজ্জামানের হাতে। বারবার বলা সত্ত্বেও খাবারের মানের কোনো উন্নতি হয়নি। ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না সাধারণ কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে খাদ্য সরবরাহকারী শাহিনুর ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি রিসিভ হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুজ্জামানের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে এবং সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।