সারাদেশ

পানি পান করে হাসপাতালে ঈশ্বরদী ইপিজেডের শতাধিক শ্রমিক

পানি পান করে হাসপাতালে ঈশ্বরদী ইপিজেডের শতাধিক শ্রমিক


পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডের ১০৩ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছেন নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গত ৪৮ ঘণ্টায় শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রোববার (১ জুন) দুপুরে সরেজমিনে নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরে ঈশ্বরদীর ইপিজেডে দুপুরের খাবারের পর থেকেই এসব শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করেন। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে গুরুতর আক্রান্তদের স্থান হচ্ছে না হাসপাতালে। হাসপাতালে ৫০ শয্যার বিপরীতে এত রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় বেশিরভাগ রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এসব রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা।

হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মে থেকে ১ জুন দুপুর পর্যন্ত ১৫০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে গত বৃহস্পতিবার হতে এই আক্রান্তের হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১০৩ জন। আক্রান্ত সবাই পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় অবস্থিত ইপিজেডের বিভিন্ন পোশাক কারখানার কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিক।

জানা যায়, পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা দুপুরের খাবার নিজ বাড়িতে থেকে নিয়ে গেলেও তারা ক্যান্টিনের সরবরাহকৃত পানি পান করেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের খাবার খাওয়ার পরে থেকে শ্রমিকদের মধ্যে পেট ব্যথা দেখা দেয়। প্রথম দিকে শ্রমিকরা পেট ব্যথা নিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ইপিজেড স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিলেও পরে তারা নিজ নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা পানঘাটা গ্রামের সুরাইয়া খাতুন (৩০) জানান, তিনি ঈশ্বরদী ইপিজেডের (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) রেনেসাঁ বাংলাদেশ লিমিটেডের সুইং বিভাগের একজন শ্রমিক। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার পেট ব্যথা শুরু হয়। এরপর ডায়রিয়া ও বমি শুরু হলে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দুদিন যাবত চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অপরদিকে ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেডের শ্রমিক হালিম (৩০) জানান, কারখানার ক্যান্টিনে খাবার খাওয়ার সময় সাপ্লাই পানি পান করেন। পরে পেটের ব্যথা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ না থাকায় বাহিরে থেকে ক্রয় করে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সুরুজ্জামান জানান, পানি ও খাবারে থাকা জীবাণু থেকে আক্রান্ত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহিদুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ইপিজেড স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কারখানায় সরবরাহকৃত পানি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয়েছে এবং কারখানায় কর্মরত সব শ্রমিকদের সরবরাহ পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

লালপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মনজুর রহমান কালবেলাকে জানান, রোববার দুপুর পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে শতাধিক রোগী ভর্তি আছেন। কলেরা স্যালাইনের সংকট হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতোমধ্যে জেলা ও কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় কলেরা স্যালাইন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।