বদলির আদেশ পেয়েও স্বপদে বহাল রয়েছেন আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপ্রাপ্ত সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেহের নিগার তনু। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের পর তার সহযোগী অধিকাংশ কর্মকর্তা বদলি হলেও দোয়ারাবাজারের ইউএনও স্বপদে বহাল থাকায় সর্বমহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ইউএনও তনুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) অভিযোগ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য মহিদ হাসান শান্ত।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসিকে তদবির করে এমপি মুহিবুর রহমান মানিক দোয়ারাবাজার উপজেলায় নিয়ে যান আ. লীগ পরিবারের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হওয়া ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী নেহের নিগার তনুকে। কারণ তার আগের ইউএনও ফারজানা প্রিয়াংকা এমপি মানিকের কথায় পাত্তা না দেওয়ায় দাপুটে এমপি মানিক তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেন। তনু আসার পর তিনি উপজেলা আ. লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবুকে নিয়ে গড়ে তোলেন বালুসহ অনিয়মতান্ত্রিক সিন্ডিকেট, চোরাচালান ও মাটিখেকোদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। সময় মতো এসব চাঁদা না দিলে নিজেই অভিযানে বের হন এই কর্মকর্তা। এমনকি উপজেলার প্রকল্প কমিটিসহ (পিআইসি) বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম চলে ইউএনও তনুর ইশারায়। এছাড়া ইউএনও তনুর নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থদাতা উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলার এজহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, বাইরে বাইরে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে তোষামোদি করলেও উপজেলা পিআইসি দিয়েছেন আ.লীগের লোকজনকে। এছাড়াও আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের যাতে গ্রেপ্তার না করে সে জন্য দোয়ারাবাজার থানা পুলিশকে সবসময় নির্দেশনা দেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য মহিদ হাসান শান্তর পাঠানো অভিযোগপত্রেও এ বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ইউএনওর পরামর্শক্রমে এলজিইডি কর্মকর্তা উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে এখন হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। যে কোনো কাজের অগ্রগতি ও অনিয়ম সম্পর্কে এলজিইডি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানেন বলেও তিনি এড়িয়ে চলেন।
আ.লীগের নেতাকর্মীদের পুনবার্সনকারী ও সাবেক প্রভাবশালী এমপি জেলা আ. লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিকের আস্থাভাজন তনুকে উপজেলা থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানান সর্বস্তরের জনসাধারণ।
দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাস্টার আব্দুল মানিক বলেন, ‘যার নিয়োগ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আ. লীগের আমলে হয়েছে। শুনতেছি তার বিরুদ্ধে শত শত মানুষের অভিযোগ। সব কিছু মিলিয়ে দেশের সব কিছু যখন পরিবর্তন হয়েছে। আমরা চাই দোয়ারাবাজারও পরিবর্তন হোক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোয়ারাবাজার উপজেলা জামায়াতের এক নেতা বলেন, ‘দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহার নিগার তনু আ.লীগের দোসর। আমার ১৬ বছর তাদের অত্যাচার সহ্য করেছি। আর আমরা নির্যাতিত হতে চাই না।’
অভিযোগের ব্যাপারে দোয়ারাবাজার ইউএনও নেহের নিগার তনু কালবেলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সত্য না। আমার বদলি হয়েছিল ঠিকই, তবে পরবর্তীতে কমিশনার স্যার আমাকে এই জায়গাতে পুনরায় নিয়োগ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে কমিশনার স্যার এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে ওসিকে নির্দেশনা প্রদানের ব্যাপার অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি ওসিকে এরকম কোনো নির্দেশ দেইনি।’