নিজ বদলির আদেশ ঠেকাতে অধস্থন সরকারি কর্মচারী ও অনুগতদের দিয়ে মানববন্ধনের নামে মাঠে নামালেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় গাংনী উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এডিবি ও রাজস্বের টাকা আত্মসাৎ, সাংবাদিকদের হত্যার বিচার দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন বন্ধ করতে পুলিশ পাঠানো, ছাগল কাণ্ডে নারীর সঙ্গে অসৌজন্যমুলক আচরণসহ নানা অভিযোগে ইউএনও প্রীতম সাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) প্রীতম সাহাকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে। সরকারি এই আদেশ পাওয়ার পরপরই ইউএনও প্রীতম সাহা বদলি ঠেকাতে মাঠে নামেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে দিয়ে তার পক্ষে দেনদরবার চালান। সেটা করতে না পেরে বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মচারীদের মাঠে নামান।
মানবন্ধনে গাংনী ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সাজাহান, উপজেলা পরিষদের অফিস সহায়ক বাইতুল্লাহ, গাংনী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুশান্ত কুমার পাত্র, বাঁশবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্টাফসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
এ সময় বক্তব্য দেন, গাংনী পূজা কমিটির সভাপতি সুশান্ত কুমার পাত্র, গাংনী পৌর বিএনপির ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সুলেরী আলভী, সাহিবুল ইসলাম এবং ধানসিঁড়ির মালিক মালশাদহ গ্রামের বশির আহমেদ।
উল্লেখ্য, প্রীতম সাহা গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকেই স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পক্ষ নিয়ে গাংনী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তার নির্দেশে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট চুরি করে নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করার অভিযোগ রয়েছে।
এর আগেও দুইবার প্রীতম সাহার বদলির আদেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। তবে প্রতিবারই তিনি নানা মহলে তদবির করে বদলির আদেশ ঠেকিয়েছেন বলে জানা যায়।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী সরকার পতনের আগপর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর তার নির্দেশে হামলা চালানো হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বরং স্বৈরাচার সরকারের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছেন।
প্রীতম সাহার দায়িত্বে অবহেলার কারণে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইটভাটা মালিক সমিতির কাছ থেকে প্রতি বছর মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে অবৈধ ভাটাগুলি পরিচালনা করার অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি।
কৃষকরা জানান, ইউএনও প্রীতম সাহা সদ্য অপসারিত গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ২০২১-২২ অর্থবছরে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে বিতরণ না করে ব্যবসায়ীদের মাঝে বিতরণ করেন। এ ছাড়াও প্রীতম সাহা বিএডিসি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হয়ে ব্যক্তি মালিকানার ক্ষুদ্র সেচের লাইসেন্স বাবদ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।