সারাদেশ

বিক্ষোভ-মহাসড়ক অবরোধে ৪০ কিমি যানজট, একজনের মৃত্যু

বিক্ষোভ-মহাসড়ক অবরোধে ৪০ কিমি যানজট, একজনের মৃত্যু


ফরিদপুরের ভাঙ্গায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় জনতা। এতে মহাসড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মসূচি পালন করছে তারা।

এতে করে দক্ষিণ অঞ্চলের অন্তত ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার যান চলাচল আবারও বন্ধ হয়ে গেছে।

অবরোধ চলাকালীন সময় ভাঙ্গা বাজার সংলগ্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে সড়কে স্টোকজনিত কারণে হাবিবুর রহমান হবি মোল্লা (৫৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভাঙ্গার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম ছিদ্দিক মিঞা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি কালবেলাকে বলেন, হবি মোল্লা আমার প্রতিবেশী তিনি হিট স্টোকে মারা গেছেন। সকালে আমরা যখন সড়ক অবরোধের আন্দোলন শুরু করি তখন হবে মোল্লা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ১১টার দিকে প্রচণ্ড রোদ ও গরমে যখন তার শরীর খারাপ লাগছিল তখন পাশের দোকানে নিয়ে তাকে আমরা মাথায় পানি দেয় ভ্যানে করে হাসপাতলে পাঠানো হয়। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তবে হবি মোল্লার মৃত্যুর বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানসিভ জুবায়ের বলেন, মঙ্গলবার সোয়া ১১টার দিকে হবি মোল্লা নামে এক ব্যক্তিকে তার স্বজনরা হাসপতালে নিয়ে আসেন। আমরা পরীক্ষার করে তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তিনি হিট স্টোট করেছেন এমন কোনো তথ্য তার সঙ্গে আসা স্বজনরা আমাদেরকে জানাননি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে তিনি সাধারণ স্টোক করে মারা গেছেন।

এদিকে সকাল থেকে অবরোধ শুরু হলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন এই মহাসড়কের বিভিন্ন গন্তব্যের গাড়ি চালক ও যাত্রীরা। মহাসড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট রয়েছে জানিয়ে সেমকো কোম্পানিতে কর্মরত একজন গাড়িচালক কবির হোসেন কালবেলাকে বলেন, মহাসড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তৈরি হয়েছে।

আমি সকালে ভাটিয়াপাড়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরার উদ্দেশে রওনা হই, ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পথ পারি দিতে ২ ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে আজকে বিকল্প রাস্তা দিয়ে নগরকান্দা তালমা সদরপুর হয়ে আমার পৌঁছাতে প্রায় ১৮০ কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। সময় লেগেছে ৮ ঘণ্টা। বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টকর এবং দুঃখজনক।

জনভোগান্তির কথা স্বীকার করে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সকাল থেকে সারাদিন অবরোধে এ মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও গাড়ি চালকদের রাসায়নিক ভোগান্তি হচ্ছে। এ বিষয়টি আমরা অবরোধের সমর্থনে আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের স্মারকলিপি সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার হাইকোর্টের রিটপিটিশন করা হয়েছে, অফিসিয়াল একটা বিষয় তাৎক্ষণিকভাবেই সমাধান সম্ভব নয়। আমরা আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার জন্য বলেছি।

বিক্ষোভকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে পুখুরিয়া, সোয়াদি ও মনসুরাবাদে মহাসড়কের ওপর গাছ ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে হাজার হাজার মানুষ। ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন কেটে নেওয়ার পরিবর্তে ভাঙ্গা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৫ আসন পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।

তাদের এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য এ অবরোধ চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান কালবেলাকে জানিয়েছেন, সকাল সোয়া ৮টার পর থেকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের অবরোধ শুরু হয়। ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্ট-পুখুরিয়া বাসস্ট্যান্ড ও হামিরদী বাসস্ট্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ থেকে গোপালগঞ্জ মহাসড়কের মনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ডও স্থানীয়দের অবরোধের মুখে পড়ে। এতে সবকয়টি মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবরোধকারীরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে অবরোধের মাধ্যমে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ফরিদপুর-৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে ইসির এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ ও অবরোধ শুরু করে স্থানীয়রা।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।