দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের পর বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রওশন আলীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার জায়গায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া গোয়েন্দা শাখার ওসি শহিদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে জেলা পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করেন।
বিজয়নগর থানার ওসি (তদন্ত) অমিতাভ দাস তালুকদার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। সাধারণ মামলা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে টাকা আদায়, সংঘর্ষে আহতদের মামলা না নেয়া এবং ফসলি জমি কাটায় জব্দকৃত ট্রাক্টর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষও ওসির অনিয়মে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওসির বিরুদ্ধে বিদ্রুপপূর্ণ মন্তব্যও করেন ক্ষুব্ধ সাধারণ জনতা।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিজয়নগরের চান্দুরা থেকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন ও তার ভগ্নীপতি মো. সালমানসহ চারজনকে আটক করে ওসি। এরপর এক লাখ ৫ হাজার টাকা নিয়ে তাদের মারধর করে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এছাড়া ১৫ রমজানের দিন উপজেলার ভিটিদাউদপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় রত্না আক্তারের ভাই সোহরাব মিয়া আহত হলে ওসি মামলা নেননি, বরং প্রতিপক্ষের মামলা নিয়েছেন। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে মধ্যরাতে হরষপুর থেকে দুটি ট্রাক্টর জব্দ করার পর এক লাখ টাকা নিয়ে এসব ছেড়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় আরও তিনটি ট্রাক্টর জব্দের পর ৬৭ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন।
ভুক্তভোগী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভগ্নিপতি মো. সালমানকে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য বিজয়নগরের কাঠমিস্ত্রি ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী সালাম মিয়ার কাছে যাওয়ার সময় ওসি তাদের গাড়ি থামান। তল্লাশির সময় এক লাখ ১০ হাজার টাকা পাওয়া গেলে ভগ্নিপতিকে মারধর করে থানায় নিয়ে যান। পরদিন ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার করে জামিন নেন। যদিও টাকা ফেরত দিতে ভিডিও করা হয়, তবুও মাত্র ৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হয়।
বিজয়নগরের সাতগাঁও উত্তরপাড়া গ্রামের শাহীন মিয়া জানান, ঈদের দিন সকালে পূর্ববিরোধের কারণে সাতজন তাকে মারধর করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ দেয়। তবে এই ঘটনায়ও ওসি মামলা নথিভুক্ত করেননি।
ভিটিদাউদপুর গ্রামের রত্না আক্তার অভিযোগ করেন, বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে পূর্ববিরোধে তাদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং ভাই সোহরাব মিয়াকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তবে ওসি প্রতিপক্ষের মামলা নেন এবং ভুক্তভোগী পরিবারটির মামলা নথিভুক্ত করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানান, ফেব্রুয়ারিতে ওসি রওশন আলী দুটি ট্রাক্টর জব্দ করেন এবং এক লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। পরবর্তী আরও তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করা হলে ৬৭ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় বলেন জানান তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা রওশন আলী জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, যদি পুলিশের কেউ কোনো অপরাধ বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।