সম্প্রতি পঞ্চগড়ে ৫ বছরের শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে মা নিজেও তা পান করেন। প্রায় এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনেরই মৃত্যু হয়।
তারা হলেন বিউটি আক্তার (২৮) ও মুসা (৫)। বিউটি শহরের নিমনগর এলাকার মতিউর রহমানের স্ত্রী।
জানা যায়, স্বামীর অনলাইন জুয়ার আসক্তি ও সংসারে অভাব অনটনের কারণে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। এরই জেরে গৃহবধূ তার সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ বিউটির পরিবারের। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন মতিউর।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, মতিউর-বিউটি দম্পতির সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মাইশার বয়স ১১ বছর আর মুসার বয়স ৫ বছর। মতিউর মসজিদে খাদেমের কাজ করতেন। পরে পঞ্চগড় বাসস্ট্যান্ডে চা বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন জুয়ায়। সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। এই নিয়ে প্রায়ই স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হতো।
গত ১১ এপ্রিল স্ত্রীকে না জানিয়ে শ্বশুর বাড়ি যান মতিউর। এ ঘটনায় মোবাইল ফোনে ফের দুজনের বাগবিতণ্ডা হয়। কিছুক্ষণ পর খবর পান, ছেলে মুসাকে বিষ খাইয়ে নিজেও পান করেছেন বিউটি। তবে মেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে খাওয়াতে পারেনি।
খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু টাকার অভাবে গত ১৫ এপ্রিল রাত ২টায় ফের পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মা-ছেলেকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথমে মুসা এর ঘণ্টাখানেক পরে বিউটি মারা যান।
বিউটির বাবা আব্দুল বারেক বলেন, ওদের পরিবারের সমস্যা একটাই, মতিউরের জুয়া। কখনো রাতে বাড়িই ফিরে না।
বিউটির মামা খোরশেদ আলম বলেন, জামাই জুয়া খেলে সব শেষ করেছে। আগে ভালো ব্যবসা করতো। তবে ভাগ্নির আত্মহত্যার কারণ জানি না।
অভিযুক্ত মতিউর রহমান বলেন, ব্যবসায় ৩ লাখ টাকা লোকসান করেছি। সংসারে অভাব বলে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। পাসপোর্টও করেছি। স্ত্রীকে না জানিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ায় তার সঙ্গে আমার ও আমার শ্যালকের কথাকাটাকাটি হয়। আমার স্ত্রীর রাগ একটু বেশি। কিছুক্ষণ পরেই শুনি ছেলেসহ বিষ খেয়েছে। টাকা না থাকায় ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতেও পারিনি।
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচএসএম সোহরাওয়ার্দী বিষপানে মা ও ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি কালবেলাকে আরও জানান, আত্মহত্যার কারণ জানার চেষ্টা করছি। পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।