জীবনের শেষ প্রান্তে এসে না আছে ভরসার মানুষ, না আছে তিনবেলা খাবারের নিশ্চয়তা। এমনি অসহায় বৃদ্ধা সখিনা বেগম (৭০)। তার দিন-রাত প্রতিদিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। অথচ সরকারের দেওয়া বয়স্ক ভাতার টাকা হতে পারত তার শেষ ভরসা। কিন্তু অভিযোগ, তিন বছর ধরে সেই টাকাও তুলছেন অন্যরা।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চণ্ডিগড় ইউনিয়নের কচুয়াডহর গ্রামের বাসিন্দা সখিনা বেগম। বর্তমানে দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের জীর্ণ ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন সখিনা। মাথার ওপর ছাদ থাকলেও নেই নিয়মিত খাবারের নিশ্চয়তা। ক্ষুধা নিবারণে আশপাশের বাড়ি থেকে খাবার সংগ্রহ করেই কোনো রকমে বেঁচে আছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন তিনি। প্রথম সংসারের একমাত্র ছেলেও মারা গেছে অনেক আগে। দ্বিতীয় সংসারে সন্তান হয়নি। সেই সতীনের সংসারেও বেশিদিন ঠাঁই মেলেনি, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবহেলার শিকার হন তিনি। সতীনের সন্তানরা বাবাকে দেখলেও দ্বিতীয় মাকে এড়িয়ে চলে। এমনকি তিন বছর ধরে সখিনার বয়স্ক ভাতার টাকা তারাই নিজেরা তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে সখিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আজকে তিন বছর ধইরা আমারে টাহা (টাকা) দেয় না, এহন কী কইয়াম? আমি চাইতো তারার (সতীনের সন্তান) কাছে; কিন্তু তারা কই টাকা আইছে না, আইলে তো আইবোই আমার হাতো (হাতে) এডাই কই আমারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে বাইরো (জঙ্গলে) পইরা থাকতাম, পরে এইনে আমারে তারা জাগা (আশ্রয়) দিছে, এহন এইনেই পইরা থাহি, যা পাই খাই, আমি কইতারি না আজকা সকালে কেডা আইয়া আমারে খাওন দিয়া গেছে, ওডাই খাইছি।
বৃদ্ধা সখিনাকে আশ্রয় দেওয়া দূরসম্পর্কের স্বজন তহিদা আক্তার বলেন, ‘সতীনের মেয়েদের কাছে তিন বছর ধরে বয়স্ক ভাতার টাকা পায় না (সখিনা), এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। পরে তো তারা দৌড়াইয়া দিছে তখন জঙ্গলে থাকত, পরে আমার খালা আশ্রয় দিছে।’
প্রতিবেশী সোহেল রানা বলেন, এই দুনিয়ায় আপনজন বলতে কেউ নেই বললেই চলে। কান্না করতে করতে চোখের পানিও শুকিয়ে ফেলেছে। তিনি যেন আর বঞ্চনার শিকার না হন। তার প্রাপ্য বয়স্ক ভাতার টাকা সরাসরি তার হাতে পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সখিনা ভাতা পাচ্ছেন। তবে সার্ভার সমস্যার কারণে এ পর্যন্ত কতবার কত টাকা উত্তোলন হয়েছে, সে তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুল তালুকদার কালবেলাকে বলেন, সখিনা বেগম দীর্ঘদিন ধরে ভাতা পাচ্ছেন, এটা নিশ্চিত হয়েছি। যে নম্বরে টাকা যাচ্ছে সেটি বর্তমানে বন্ধ। তবে সখিনা যাতে তার প্রাপ্য টাকা পান, সেজন্য নম্বর পরিবর্তন করা হবে, যেন তিনি প্রাপ্যটা পান।
তিনি আরও বলেন, এতদিন উনার টাকা যারাই নিয়েছেন সে টাকাও উদ্ধার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।