সারাদেশ

মরদেহ দাফনের পাঁচদিন পর বাবা জানলেন সন্তান জীবিত

মরদেহ দাফনের পাঁচদিন পর বাবা জানলেন সন্তান জীবিত


চট্টগ্রামের খাল থেকে উদ্ধার করা মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করার পাঁচ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর বাবা জানতে পেরেছেন তার সন্তান মারা যায়নি, এখনো জীবিত। ঘটনাটি জানার পর খোদ চমকে উঠেছে পিবিআইয়ের কর্মকর্তারাও।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (৩ মে) চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার দেওয়ান বাজারের রুমঘাটা এলাকার খাল থেকে অজ্ঞাতনামা একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন রোববার দুপুরে ভোলা থেকে আসা উবাইদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি মরদেহটি তার ছেলে আবদুর রহিমের বলে শনাক্ত করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি গ্রামের বাড়ি ভোলায় নিয়ে যান তিনি। সেখানে দাফনও করা হয়।

কোতোয়ালি থানা-পুলিশ মরদেহের সুরতহাল করে হস্তান্তরও করে। তবে হঠাৎই নিহত আবদুর রহিমের মুঠোফোন সচল হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যাচাই-বাছাই শুরু করে। শেষে মুঠোফোন ট্র্যাক করে তাকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। আনা হয় তার বাবা উবাইদুল্লাহকেও।

বাবা ও ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বেরিয়ে এল প্রকৃত ঘটনা। পাওনা টাকা ফেরত দিতে না পেরে মুঠোফোন বন্ধ করে আত্মগোপন করেছিলেন নির্মাণশ্রমিক আবদুর রহিম। পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় যান। শেষে চট্টগ্রাম নগরের একটি খালে মরদেহ পাওয়ার কথা জানতে পারেন তারা। রহিমের বাবা উবাইদুল্লাহ ভুলবশত মরদেহটি নিজের ছেলে রহিমের বলে শনাক্ত করে ভোলায় নিয়ে দাফন করেন।

গত ৪ মে খাল থেকে ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে শনাক্ত করেছিলেন উবাইদুল্লাহ। তখন তার সন্দেহ ছিল ছেলে রহিমকে খুন করা হয়। সেদিন তিনি বলেছিলেন, আবদুর রহিম সপ্তাহখানেক আগে জানিয়েছিলেন মুঠোফোনে গেমস খেলে একটি আইফোনসহ চার লাখ টাকা জিতেছেন তিনি। যারা এ পুরস্কার দেবেন, তারা ৪০ হাজার টাকা চেয়েছেন। সেই টাকা জোগাড় করতে রহিম অনেকের কার থেকে ঋণ করেন। কিন্তু পুরস্কারের বিষয়টি ছিল প্রতারণা। ঋণ করে টাকা হারিয়ে আবদুর রহিম নিখোঁজ হয়ে যান। উবাইদুল্লাহর ধারণা ছিল, জুয়াড়ি চক্রের হাতে তিনি খুন হয়েছেন।

আবদুর রহিমের বাবা উবাইদুল্লাহ পিবিআইকে বলেন, নিখোঁজ থাকায় মরদেহটি দেখে মনে হয়েছিল ছেলের। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। পিবিআইও তদন্ত করে তা নিশ্চিত হয়েছে।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা কালবেলাকে বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের পর পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। দাফন হওয়া আবদুর রহিমের মুঠোফোন চালু হলে পিবিআই যাচাই-বাছাই শুরু করে। একপর্যায়ে বুধবার তিনি জীবিত নিশ্চিত হওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার (৮ মে) তাকে পিবিআই হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, পাওনা টাকা না দিতে পেরে মুঠোফোন বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, খাল থেকে উদ্ধার ব্যক্তির মরদেহ পচে গিয়েছিল। ফুলে গিয়েছিল শরীর। তবে মুখে খোঁচা খোঁচা যে দাড়ি ছিল তা দেখেই বাবা মনে করেছিল এটি তার সন্তান। ছবির সঙ্গে সেই মরদেহ মেলালে অনেকটাই কাছাকাছি তাদের শারীরিক অবকাঠামো। এ কারণেই ভুলটি হয়েছে।

নাইমা সুলতানা বলেন, রহিম পরিচয়ে যে মরদেহটি দাফন করা হয়েছে, তার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা আছে। নিখোঁজ কারও স্বজন দাবি করলে ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ যাঁরা রয়েছেন, তাদের ডিএনএর সঙ্গে মরদেহের ডিএনএ মেলেনি।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।