কুমিল্লার মুরাদনগরে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। হামলায় বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এ ঘটনায় বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
পরে মুরাদনগর থানা পুলিশ ও মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাকিব হাসান খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ আনা হয় একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাকি বিল্লাহর বিরুদ্ধে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিদ্যালয় থেকে বিল্লাহকে জোর করে ধরে নিয়ে যেতে আসে ওই ছাত্রীর বড় ভাই ইমনসহ ৫ বহিরাগত।
এ সময় তারা বাকি বিল্লাহকে না পেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার দুই বন্ধু শাহজালাল ও আরমানকে তুলে নিয়ে বিদ্যালয়ের গেইটের বাইরে মারধর করতে থাকে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বাধা দিলে তার ওপরেও হামলা চালায় বহিরাগতরা।
বিষয়টি বিদ্যালয়ে জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন ও গণিত বিভাগের শিক্ষক জহিরুল ইসলামসহ দুপক্ষের প্রায় ১৫ জন আহত হয়।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের সবার নাম ও পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে মুরাদনগর থানা পুলিশ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে বহিরাগতদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মুরাদনগর থানায় নিয়ে আসা হয়।
পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক দাতা সদস্য শাহজাহান খান বাবুল জানান, যদি কোনো ছাত্রীকে কেউ ইভটিজিং করে থাকে, তাহলে সেটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর প্রয়োজন ছিল। এইভাবে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদেরকে টানাহেঁচড়া করে বাইরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা মোটেও কাম্য নয়। এর সঠিক বিচার হওয়া উচিত।
পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন জানান, ইভটিজিংয়ের অভিযোগের বিষয়টি বিদ্যালয়ের কারোই জানা নেই। বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যদি ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে আগে জানানোর দরকার ছিল।
কিন্তু তারা সেটা না করে মঙ্গলবার বিকেলেও এই বহিরাগত ছেলেগুলো নবম শ্রেণির ছাত্র বাকি বিল্লাহকে তুলে নিতে বিদ্যালয়ে এসেছিল। তখন তাদেরকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। তারা সেটি না করে পরদিন বুধবার সকালে এসে দুইজন শিক্ষার্থীকে টানাহেঁচড়া করে বিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে মারধর করে।
তিনি জানান, আমি প্রতিবাদ করাতে তারা আমাকেও ধাক্কা দেয়। এসবে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বহিরাগতদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে তাদেরকে আটক রাখে। পরে পুলিশ ও এসিল্যান্ড স্যার এসে তাদেরকে মুরাদনগর থানায় নিয়ে যায়।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে যে বহিরাগত ৫ জন গিয়েছিল, তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কিছু শিক্ষার্থীদেরকেও ডাকা হয়েছে। তারা আসার পরে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান জানান, আমাকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। পরে আমি সেখানে এসিল্যান্ডকে পাঠাই আইনশৃঙ্খলার বিষয়টা দেখার জন্য। যেহেতু এটা মোবাইল কোর্টের আওতায় আসে না, সেজন্য মুরাদনগর থানার ওসিকে বিষয়টা দেখার জন্য বলা হয়েছে।