ষাটোর্ধ আয়শা বেওয়া। জমি-জমা না থাকায় লালমনিরহাট পৌরসভার বিএনপি কলোনিতে বসবাস করেন। গরু ছাগল পালন করে সংসার চালান। বছর খানেক আগে স্বামী মারা যাওয়ার জমানো টাকা দিয়ে একটি গরু কেনেন। গরুটি বাছুর দেয়।
কিন্তু হঠাৎ আদরের সেই গরুটি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। সর্বস্ব দিয়ে চিকিৎসা করে গরুটি বাঁচাতে পারলেও মারা যায় বাছুরটি। দরিদ্র বিধবা নারী এখন গরুর শোকে কাতর।
একই রোগে মারা গেছে প্রতিবেশী অসুস্থ বীর বীরমুক্তিযোদ্ধা জোগেশ চন্দের গরু। জোগেশ মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা জমিয়ে দুটি গরু কিনেছিলেন। হঠাৎ ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে দুধের বাছুর রেখে মারা যায় একটি গরু। এতে প্রায় বাকরুদ্ধ তিনি। গরুর শোকে জোগেশ চন্দ্রের স্ত্রী মায়া রানী ছেড়ে দিয়েছেন নাওয়া খাওয়া। তার মরা গরু যেখানে পুঁতে রাখা হয়েছে সেখানে তিনি কান্নাকাটি করেন।
শুধু আয়শা বেওয়া ও মায়া রানী নয়, লাম্পি স্কিন রোগে গত এক সপ্তাহে মারা গেছে ওই কলোনির ভূমিহীন নাহিদ, আজিজার, যাদু মিয়াসহ ৮ পরিবাবের ৮টি গরু। তারা দিনমজুরির টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে বাঁচাতে পারেননি গরুগুলো।
ভুক্তভোগীরা জানান, কষ্টের টাকায় নিজেরাই গরুর চিকিৎসা করিয়েছেন। সরকারি কোনো চিকিৎসা সহায়তা তারা পাননি। এমনকি বারবার খবর দেওয়ার পরেও সরকারি কোনো পশু চিকিৎসক এসে ব্যবস্থাপত্র কিংবা পরামর্শ দেননি।
এলাকাবাসীরা জানান, অনেকে অজ্ঞতার কারণে ভুল চিকিৎসা করিয়েন। অনেকে করেছেন কবিরাজি চিকিৎসা। সরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করালে হয়তো গরুগুলো বাঁচানো যেত।
লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলার ৫ উপজেলায় সহস্রাধিক গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনেকের গরু মারা যাচ্ছে। বেশ কয়েক মাস হতে জেলায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমরা যেখানেই খবর পাচ্ছি, সেখানেই চিকিৎসক পাঠিয়ে পরামর্শসহ অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছি।