ব্যবসা

বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে আরও সময় প্রয়োজন : ডিসিসিআই সভাপতি

বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে আরও সময় প্রয়োজন : ডিসিসিআই সভাপতি


ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্নের লক্ষ্যে আরও কিছুদিন সময় প্রয়োজন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পারস্পরিক শুল্কারোপসহ বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস, শিল্পখাতে জ্বালানি সরবরাহ অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগ স্থবিরতা, নানাবিধ দুর্নীতি প্রভৃতি কারণে বেসরকারি খাতের অগ্রগতি তেমন আশাব্যঞ্জক নয়।’

রোববার (২৪ আগস্ট) ডিসিসিআই আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. মঞ্জুর হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (গবেষণা), মুদ্রানীতি বিভাগ মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের, পরিচালক (এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মুস্তাফা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।

তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘শুল্ক ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা উল্লেখজনক হারে বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়েছে এবং ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর কারণে গত বছরের তুলনায় বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতি আরও বেশি মন্থর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে, ডিসিসিআই কমপক্ষে ৩ বছর এলডিসি উত্তরণ স্থগিত করার প্রয়োজন বলে মনে করে, যাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি, একটি শক্তিশালী ট্রানজিশন কৌশল বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট নীতিমালাগুলো হালনাগাদ সম্ভব হয়।’

করপোরেট করহার বিশেষকরে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক হওয়া উচিত বলে মনে করে ডিসিসিআই সভাপতি। যার কারণে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘দেশের ম্যাক্রো-ইকোনোমি কিছুটা হলেও স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে এবং রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা স্বস্তির বিষয়। মূল্যস্ফীতি বেশ কমেছে, তবে চালের মূল্য ক্রমাগত বাড়ছে, তাই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মূল্যস্ফীতি আরও কমতে পারে।’

তবে শুধুমাত্র ঋণের সুদ হার বেশি থাকা, না বাণিজ্যিক সহায়ক পরিবেশ অনুপস্থিতির কারণে বিনিয়োগ বাড়ছে না, সেটি খতিয়ে দেখার ওপর তিনি জোরারোপ করেন। সে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি না বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ যেন হ্রাস না হয়ে, সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, এমতাবস্থায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলেও মূল্যস্তর বেশ উপরে চলে এসেছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অবনমনের এ বিষয়টি বেশ আশঙ্কার।’

তিনি উল্লেখ করেন, বন্ডেড ওয়্যারহাইস ও ব্যাংক-টু-ব্যাংক এলসি সুবিধার কারণে তৈরি পোশাক খাত আজকে এ পর্যায়ে এসেছে, তাই রপ্তানির সম্ভবানাময় অন্য খাতগুলোকে এ ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. একে এনামুল হক বলেন, ‘অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা মন্দের ভালো, অবস্থার উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য তা কাঙ্ক্ষিত নয়।’

তিনি উল্লেখ করেন, দুর্নীতি যে খুব একটা কমেছে তা বলা যাবে না, অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং দুর্নীতির কারণে শুধু বদলি দিয়ে শাস্তি দিলে হবে না, মানুষের ভেতরের পরিবর্তন প্রয়োজন।

এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মো. রাবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ট্রেড কানিক্টিভিটি বাড়ানো এবং রপ্তানি বাজারের সঙ্গে এসএমইদের সংযোগ বৃদ্ধি এবং পণ্য পরিবহন খরচ হ্রাস করার ওপর জোর দিতে হবে। তৈরি পোশাক খাতে ম্যান মেইড ফাইবারের ব্যবহার বাড়ানো এবং চামড়া শিল্পে স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলাসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর দরকার।’





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।