রাশিয়ান মডেল, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও নৃত্যশিল্পী মনিকা কবির। অনেকদিন ধরেই তিনি বাংলাদেশে আছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাস্তার মাঝেই করছেন কনটেন্ট। তার এসব কর্মকাণ্ডে কেউ মুগ্ধ হচ্ছেন, আবার কেউ হচ্ছেন বিস্মিত। নিজের ব্যক্তিজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন কালবেলার সঙ্গে
আপনার নাম?
আমার রুশ নাম মারিয়া ভ্যালিরিয়েভনা। আমার রুশ ডাকনাম মনিশকা। এখন সবাই মনিকা কবির বলে ডাকে।
কবির নাম কীভাবে এলো?
নামের শেষাংশের ‘কবির’ নিয়েছি আমার দাদার কাছ থেকে। দাদা ও দাদি ভারতের নয়াদিল্লির মানুষ। তাদের থেকেই ‘কবির’ নামটি নেওয়া।
বেড়ে ওঠা কোথায়?
আমার বেড়ে ওঠা রাশিয়াতে। সেখানে ছোটবেলা থেকে পাঁচ বছর থাকি। এরপর বাংলাদেশে আসি। আট মাসের মতো এখানে থেকে বাংলা শিক্ষা নেই। তারপর আবার রাশিয়াতে চলে যাই। সেখানে লেখাপড়া শুরু করি। এরপর পরিবারের সঙ্গে সেখানেই থেকে স্কুল-কলেজ শেষ করা হয়। এর মধ্যে পরিবারের সঙ্গে ছোটবেলাতেই ইউরোপের কয়েকটি দেশে ঘুরতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে যেভাবে সম্পর্ক?
আমার বাবা বাংলাদেশে চামড়ার ব্যবসার সঙ্গে অনেকদিন যুক্ত ছিলেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে আসি ২০১২ সালে। তখন থেকেই এখানে আসা-যাওয়া। এরপর ন্যানির কাছে বাংলা শিখেছি। আশা করছি এবার পুরো বাংলা শিখে ফেলব।
এরপর আবার বাংলাদেশে আসা হয়?
১২ বছর বয়সে বাংলাদেশে আসি। তারপর ২০১৫ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করতে বাংলাদেশে আসা হয়। এরপর কাজের জন্য প্রায়ই বাংলাদেশে আসা হয়।
আপনার স্থায়ী বসবাস এখন কোথায়?
আমি এখন তিনটি দেশে থাকছি—রাশিয়া, তুরস্ক ও বাংলাদেশ। তবে এখন বাংলাদেশে বেশি থাকা হচ্ছে। কারণ এখানে থেকে শান্তি পাই।
আপনার বাবা-মা ও পরিবারের সবাই কোথায় থাকেন?
আমার বাবা ইতালিতে থাকেন। মা ছোট ভাইকে নিয়ে তুরস্কে থাকেন। আর বড় ভাই কোথায় থাকেন বলতে চাই না।
আপনি কয়টি ভাষা জানেন?
আমি মোট ৮টির মতো ভাষা জানি। এর মধ্যে আছে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, রাশিয়ান, টার্কিশ, ইংরেজি, চায়নিজ ও জার্মান।
সবচেয়ে পছন্দের ভাষা কোনটি?
আমি বাংলা বলতে বেশি ভালোবাসি। কারণ, পৃথিবীর মধ্যে এটি একমাত্র ভাষা, যার জন্য মানুষ রক্ত দিয়েছে।
আপনার বাবা এবং মায়ের দেশ কোনটি?
আমার বাবা ভারতীয় এবং মা রাশিয়ান।
আপনার বাবা-মা এবং আপনার ধর্ম?
আমার বাবার ধর্ম ইসলাম, মা খ্রিষ্টান। আমি নিজেও খ্রিষ্টান। আমার মায়ের নাম ম্যারিয়া গোজেন।
আপনি তো সামাজিক মাধ্যমে অনেক কিছু করেন। নিজেকে কোন পরিচয় দিতে ভালোবাসেন?
নিজেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচয় দিতে ভালো লাগে। তুরস্কে থাকার সময় লাতিন নাচ শিখেছিলাম। একদিন আমার এক বন্ধুকে নিয়ে কফি খেতে গিয়েছিলাম। সেখানে এক তুর্কি আমাকে নাচ শেখার কথা বলেন। তারপর থেকেই মূলত নাচ শেখা শুরু।
এ ছাড়া এখন কনটেন্ট ক্রিয়েশনের ব্যাপারটিও উপভোগ করছি। তবে নাচের প্রতি আমার ভালো লাগা বেশি। সুযোগ পেলেই নাচতে শুরু করি। এমনকি ঘুম থেকে উঠেই আমার নাচা শুরু। কারণ, আমার মনে হয় নাচলে মানুষের মন এবং শরীর দুটিই
ভালো থাকে।
পাবলিক স্পেসে ভিডিও করার আইডিয়া যেভাবে এলো?
এটি আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। তিনি প্রথম আমাকে এটি করার জন্য ক্যামেরার পেছন থেকে উৎসাহ দেন। প্রথমে রাশিয়াতেই করতাম। এরপর যখন সাড়া পাই তখন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করি।
রাস্তায় মানুষের রিঅ্যাকশন কেমন আসে?
সবাই যে ভালোভাবে নেয়, বিষয়টি এমন নয়। তবে অনেকেই অনুপ্রেরণা দেন, আবার অনেকেই নেতিবাচক কথা বলেন। আমি নেতিবাচক মন্তব্যে গুরুত্ব দিই না। আমি আমার মতো কাজ করে যাচ্ছি। কারণ আমি জানি কী করছি। যেটা করে মজা পাই,
সেটাই করছি।
বাংলাদেশ কেমন লাগে?
দেশটা আমার কাছে অসাধারণ লাগে। বিশেষ করে এখানকার মানুষ। একটা অভিজ্ঞতা বলি—আমি গুলশান-২-এ একটি ভিডিও করছিলাম রাস্তার মাঝে। তখন পুলিশ এসে আমাকে নিরাপত্তা দেয় এবং আমার যেন বিপদ না হয়, তারা সেটি খেয়াল করে। এমনটা আমি পৃথিবীর কোনো দেশে পাইনি। এ ছাড়া এখানকার খাবার আমার ভীষণ প্রিয়।
বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার ইচ্ছা আছে?
হ্যাঁ, আছে। তবে এখনই বলতে পারছি না।