ফিলিস্তিনের শিশুদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে নিজস্ব গানের লিরিক বদলে ফেলল যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় রক ব্যান্ড ‘গ্রিন ডে’। গত সপ্তাহে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের কোচেল্লা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে গাইতে গিয়ে ‘জেসাস অব সাবারবিয়া’ গানটির একটি লাইন পরিবর্তন করে পরিবেশন করেন ব্যান্ডটির ভোকাল বিলি জো আর্মস্ট্রং।
বিলি মূল গানের লাইনে থাকা ‘যখন তুমি নির্যাতনের শিকার হও, তখন যন্ত্রণা থেকে পালিয়ে যাও’ এর পরিবর্তে গাইলেন ‘ফিলিস্তিনের বাচ্চাদের মতো যন্ত্রণা থেকে পালিয়ে যাও’- যা ক্যালিফোর্নিয়ার এম্পায়ার পোলো ক্লাবের মঞ্চে উপস্থিত লাখো দর্শকের করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে। দ্রুতই সামাজিকমাধ্যমে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রিন ডে’র এই পরিবর্তিত কথার গানের ভিডিও। অনেকেই তাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, এভাবে ফিলিস্তিনের শিশুদের দুর্দশা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার সাহস দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও বিলি ‘আমেরিকান ইডিয়ট’ গান দিয়ে পরিবেশনা শুরু করে এর শুরুতেও পরিবর্তন এনে বলেন : ‘আমি এমএজিএ এজেন্ডার অংশ নই’, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানের প্রতি কটাক্ষ। অন্য একটি পারফরম্যান্সে বিলি আর্মস্ট্রং ‘আমি কি প্রতিবন্ধী, নাকি আমি কেবল অতি আনন্দিত?’ লাইনটি বদলে বলেন : ‘আমি কি প্রতিবন্ধী, নাকি আমি শুধু জেডি ভ্যান্স?’, যা একজন মার্কিন রাজনীতিবিদকে ব্যঙ্গ করে। ‘হলিডে’ গাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘এই গানটি যুদ্ধবিরোধী।’ তাদের ৯০ মিনিটের পরিবেশনায় ছিল ‘বাস্কেট কেস’, ‘ওয়েক মি আপ হোয়েন সেপ্টেম্বর এন্ডস’ ও ‘মাইনরিটি’র মতো অসাধারণ সব গান।
গাজার শিশুদের জন্য সোচ্চার হয়ে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধের দাবি জানিয়ে ভক্তদের এই অবিস্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেয় গ্রিন ডে। এই পারফরম্যান্স এমন এক সময়ে আসে যখন ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্রে বোমা হামলা করছে এবং খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশ ঠেকিয়ে রাখছে। মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স হঠাৎ উপস্থিত হয়ে ফোক সিঙ্গার ‘ক্লাইরো’-কে মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেন, এবং গাজার যুদ্ধ থামাতে তার অবস্থান প্রকাশ করেন। একই সময়ে আইরিশ ব্যান্ড ‘নিক্যাপ’ অভিযোগ করে যে, তাদের ফিলিস্তিনপন্থি বার্তাগুলো ইউটিউব লাইভস্ট্রিম থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। পারফরম্যান্সে তারা ইসরায়েলের যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেন।
বিলি আর্মস্ট্রং অতীতেও ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেমন মালয়েশিয়ার এক কনসার্টে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। গ্রিন ডে বরাবরই তাদের গানে রাজনৈতিক বার্তা অন্তর্ভুক্ত করে এসেছে। ‘জেসাস অব সাবারবিয়া’ মূলত এক হতাশ তরুণের চোখে যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট ও আত্মবিভ্রমের গল্প। ‘আমেরিকান ইডিয়ট’ অ্যালবামটি ৯/১১-পরবর্তী আমেরিকাকে ব্যান্ডের দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরেছে। ২০০৪ সালে বুশ প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলে ব্যান্ডটি তাদের সপ্তম অ্যালবাম ‘আমেরিকান ইডিয়ট’ প্রকাশ করেছিল। এবার কোচেল্লার এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট, বিশ্বমঞ্চে ফিলিস্তিনের পক্ষে কণ্ঠ আরও জোরালো হচ্ছে। আর গ্রিন ডে তাদের গানের শক্তিকে ব্যবহার করে সেই বার্তাই পৌঁছে দিচ্ছেন বিশ্ববাসীর কাছে।