পাকিস্তানের বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে আলোচিত তারকাদের তালিকা করলে যে ক’জনের নাম প্রথম দিকে আসবে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হানিয়া আমির। হাসিখুশি মুখ, প্রাণবন্ত অভিনয় আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি— সব মিলিয়ে অল্প সময়েই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ভক্তদের হৃদয়ে। সম্প্রতি বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতা দিলজিৎ দোসাঞ্জের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করে আবারও শিরোনাম হয়েছেন এই নায়িকা।
বাল্যকাল ও পরিবার
১৯৯৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম হানিয়ার। সাধারণ পরিবারে বড় হলেও ছোটবেলা থেকেই তার ভেতরে লুকিয়ে ছিল শিল্পীসত্তা। তবে শৈশবটা বেশ কঠিন ছিল। বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো না থাকায় তাদের বিচ্ছেদ ঘটে, ফলে মা-ই হয়ে ওঠেন হানিয়ার সবচেয়ে বড় ভরসা। যে কারণে জীবনের শুরু থেকেই নানা কষ্টের মধ্য দিয়েই তাকে বেড়ে উঠতে হয়। শৈশব-কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়ে হানিয়া যখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখেন, তখন নাট্যকলা ও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে তার।
শোবিজে যাত্রা
হানিয়ার শোবিজে পথচলা শুরু হয় একেবারেই ভিন্নভাবে। বন্ধুদের সঙ্গে বানানো কিছু ডাবস্ম্যাশ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে তাকে আলোচনায় নিয়ে আসে। লাহোরের ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (FAST)-এ পড়াশোনার সময় থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে এসব ছোট ছোট ভিডিও বানাতেন তিনি। এক পর্যায়ে ভিডিওগুলো নজরে পড়ে নির্মাতা ইমরান কাজির। এরপর হানিয়া অভিনয়ের সুযোগ পান ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র জানান-এ। প্রথম সিনেমাতেই হানিয়ার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও স্বাভাবিক অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়।
এরপর টেলিভিশন নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র থেকে শুরু করে ওয়েব সিরিজ— সব জায়গাতেই নিজেকে প্রমাণ করতে থাকনে তিনি। ফিরি ওয়োহি মোহাব্বত, ইশকিয়া, মেরি কাহানি মেরি জুবানিসহ একাধিক নাটক তাকে পাক টেলিভিশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখে পরিণত করে।
হানিয়ার ভাষায়, আমি চাই না মানুষ আমাকে শুধু ‘সুন্দরী নায়িকা’ হিসেবেই জানুক। আমি একজন অভিনেত্রী, আর আমি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজ করতে চাই।
প্রেম ও ব্যক্তিগত জীবন
জনপ্রিয় তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কৌতূহল সবসময়ই থাকে। হানিয়া আমিরও এর ব্যতিক্রম নন। একসময় অভিনেতা আসিম আজহারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভক্তদের কাছে ‘গোলস কাপল’ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্ক টেকেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই হানিয়া নিজেই বিষয়টি পরিষ্কার করে দেন। বর্তমানে তিনি অবিবাহিত, তবে প্রায়ই সহঅভিনেতাদের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আলোচনা হয়।
হানিয়ার নিজের ভাষ্য, ‘আমি তরুণী, আমি সত্যিকারের, আমি খোলামেলা, আমি উচ্ছল এবং আমি দয়ালু। আমি বেড়ে উঠছি, তাই ভুল করব, বদলাব, খারাপ সিদ্ধান্ত নেব, আবার ভালোও নেব। কিন্তু আমি মানুষ হওয়ার জন্য কখনো ক্ষমা চাইব না।’
কেন এত জনপ্রিয়?
হানিয়ার জনপ্রিয়তার বড় রহস্য তার স্বাভাবিকতা। ক্যামেরার সামনে যেমন, বাস্তব জীবনেও তেমনই খোলামেলা ও হাসিখুশি তিনি। ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে তার ভিডিওগুলো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পাশাপাশি ফ্যাশন ও বিউটি ব্র্যান্ডের কাছেও তিনি পছন্দের মুখ। নিজের জনপ্রিয়তা নিয়ে হানিয়া বলেন, ‘আমি সবসময় বলি, আমি আমার জনপ্রিয়তা নিয়ে ভয় পাই। কারণ মনে হয়, যখন আমি আল্লাহর সামনে যাব, তখন কী বলব?’
সমালোচনা ও বিতর্ক
জনপ্রিয়তার পাশাপাশি নানা বিতর্কও হানিয়াকে ঘিরে থাকে। কখনো ফ্যাশন সেন্স, কখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলামেলা মন্তব্য— এসব কারণে সমালোচনার শিকার হয়েছেন একাধিকবার। তবে এসবকে ইতিবাচকভাবে নিয়েই নিজেকে আরও পরিণত করেছেন তিনি। হানিয়ার মতে, ‘আমার ত্বক আমাকে সংজ্ঞায়িত করে না। আমি যেমন আছি, তাতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’
সূত্র : ডন নিউজ উর্দু ও অন্যান্য