মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশকে তোয়াক্কা না করলেও ইরানকে সমীহ করে চলতে বাধ্য ইসরায়েল। মূলত তেহরানের বিশাল সামরিক শক্তি ইসরায়েল বিরোধী চিন্তাতেই তেল আবিবের ভয়। এই অঞ্চলে শুধুমাত্র ইরানই ইসরায়েলকে টেক্কা দিতে পারে। আর তাই ইরানকে কোনো রকমের সুযোগই দিতে চান না ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইরানকে আঘাত করার জন্য সর্বদা উন্মুখ তিনি।
জানা গেছে, ইরানের ওপর সর্বোচ্চ আঘাত হানতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমতি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। তবে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় এবার তেহরানকে নিয়ে প্ল্যান বি তৈরি করেছে ইসরায়েল। আর সেই প্ল্যান বি হলো – ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে হত্যা করা।
গেল দুই বছর ইসরায়েলের জন্য অনেকটা দু’স্বপ্নের মতো ছিল। ২০২৩ সালে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ত্রিমুখী হামলা। সেই হামলার ক্ষত সারিয়ে ওঠার আগেই গেল বছর ইরানের মাটি থেকে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে সরাসরি মিসাইল হামলা। সবমিলিয়ে বড় ধাক্কাই খেয়েছিলেন নেতানিয়াহু। চারপাশে এত এত শত্রু মোকাবিলা যে ইসরায়েলের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছিল, তা খুব ভালো বুঝতে পারছিলেন তিনি। তাই ইরানে ব্যাপক হামলার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিল ইসরায়েল।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্মতি না মেলায় আপাতত সেই প্রক্রিয়া থমকে যায়। ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা ক্ষণিক সময়ের জন্য ভেস্তে গেলেও তেহরানকে দমাতে বিকল্প আরেকটা রাস্তা তৈরি করে তেল আবিব। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মাথাদের সরিয়ে দিতে চান নেতানিয়াহু।
জানা গেছে, তেল আবিবের হিট লিস্টে প্রথমেই রয়েছে ইসরায়েলে ৪০০ মিসাইল হামলার কারিগর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ। তাকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে মোসাদকে। বলা হচ্ছে, সরাসরি ইরানে হামলা চালিয়ে ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এয়ারফোর্সের প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহকে হত্যা করলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে ইরান। তেহরান তখন ইহুদিবাদী রাষ্ট্রে নতুন করে সরাসরি হামলা চালাতে পারে।
ইরান যতি তেলআবিবে সরাসরি হামলা চালায় তাহলে ইসরায়েলও ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে আমেরিকার সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তি হয়ে গেলেও তেহরানের হামলার অজুহাত দেখিয়ে ইরানে হামলার মার্কিন সম্মতি আদায় করতে পারে ইসরায়েল। আর জেনারেল আমিরকে টার্গেট করার কারণ, তিনি প্রকাশ্যেই বার বার বলেছেন, ইসরায়েলে হামলা চালাতে চান তিনি।
ইসরায়েলে গেল অক্টোবরে যখন দ্বিতীয়বার সরাসরি হামলা চালায় ইরান তখনই জেনারেল আমিরকে আততায়ী হামলায় হত্যার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা। পরে তেল আবিব সিদ্ধান্ত নেয় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ও ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎপাদনের সক্ষমতা গুড়িয়ে দিলেই তা দেশটির জন্য যথেষ্ট হবে।
ইরানের শত্রুরাষ্ট্রগুলোর দাবি, পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ঠেকাতে এখন একটা সমঝোতা করতে চাইছেন ট্রাম্প। এজন্য দুই সপ্তাহ ধরে ইরানি ও মার্কিন কর্মকর্তারা আলোচনা শুরু করেছেন। ইরান তার পরমাণু প্রকল্প বাদ দিলে নেতানিয়াহু বা ট্রাম্পের আর কোনো চিন্তা থাকবে না। তেমন কিছু না ঘটলে, বিকল্প রাস্তা খোলা রাখতে চাইছেন নেতানিয়াহু।