চীনের সঙ্গে স্মরণকালের সবচেয়ে জটিল বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই বাণিজ্যযুদ্ধে শুল্কারোপকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। বেইজিংকে ধরাশায়ী করতে এবার চীনা পণ্যে ২৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হয় এমন সকল চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেন ট্রাম্প। নতুন ঘোষণায় এটি আরও ১০০ শতাংশ বাড়ানো হলো।
সংবাদমাধ্যম নিউজউইক জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় নতুন এ শুল্কারোপের কথা বলা হয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, চীনের পাল্টা পদক্ষেপের কারণে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্যের ওপর ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করা হবে। তারা এ পদক্ষেপকে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট ট্রেড পলিসির’ অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্কিন অর্থনীতির আধিপত্যের জায়গা আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। সে জন্য ইতিমধ্যে বড় ধরনের শুল্ক পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির ওপর ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। তবে এখানে মূলত টার্গেট হয়েছে চীন।
ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করেছে, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে সামরিক, মহাকাশ ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উচ্চ-প্রযুক্তি উপকরণ, যেমন গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম এবং অ্যান্টিমনি সরবরাহ সীমিত করছে। সম্প্রতি, চীন ছয়টি ভারী বিরল মৃত্তিকা ধাতু ও বিরল মৃত্তিকা চুম্বকের রপ্তানি স্থগিত করেছে। এটি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কয়েক মাস আগে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম, অ্যান্টিমনি এবং সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ-প্রযুক্তি উপকরণের রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। এ সপ্তাহেই চীন ছয়টি ভারী বিরল মৃত্তিকা ধাতু এবং বিরল মৃত্তিকা চুম্বকের রপ্তানি স্থগিত করেছে। এর মাধ্যমে তারা গাড়ি প্রস্তুতকারক, মহাকাশযান নির্মাণকারী, সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি এবং সামরিক ঠিকাদারদের কাছে সরবরাহ বন্ধ করতে চাইছে।
ট্রাম্প তার নতুন পাল্টাপাল্টি শুল্ক পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের ঘোষণা দেন। তবে অন্য সকল দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেলেও চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছেন। ট্রাম্পের শুল্কের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন গত শুক্রবার মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়েছে।
শুল্ক সংক্রান্ত এই দ্বন্দ্ব বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে ওলটপালট করে দেয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই বাণিজ্য যুদ্ধে চীন এগিয়ে আছে বলেই মনে হচ্ছে।