বিশ্ব

কাতারের পর এবার কার পালা?

কাতারের পর এবার কার পালা?


সম্প্রতি ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, কাতার ও ইয়েমেন—এই ছয় দেশে ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত এই উত্তেজনা বাড়িয়েছে। অন্যদিকে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ কাতারের রাজধানী দোহায় সিনিয়র হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এই অভূতপূর্ব ঘটনাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠছে—ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট কোথায়? বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং গাজা যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল কূটনৈতিক সীমা ভেঙে দিয়েছে। দোহা দীর্ঘদিন ধরে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের আলোচনার কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সতর্ক করে বলেছেন, যে দেশগুলো সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেবে, তারা যদি তাদের বহিষ্কার বা বিচারের হাতে তুলে না দেয়, তাহলে ইসরায়েল নিজেই ব্যবস্থা নেবে।

ইস্তাম্বুল কি পরবর্তী টার্গেট?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শোয়ান জানগানা মনে করেন, নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুল এখন সম্ভাব্য পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে। তিনি বলেন, প্রথম হামলাটি ইস্তাম্বুলেই হবে ভেবেছিলাম, তবে দোহায় একসঙ্গে একাধিক হামাস নেতাকে নির্মূল করার কৌশলকেই ইসরায়েল অগ্রাধিকার দিয়েছে।

অন্যদিকে তুর্কি বিশ্লেষক গোক ওগলু বলেন, ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়ায় তুরস্কে ইসরায়েলি হামলার সম্ভাবনা কম। তবে আংকারা এরই মধ্যে সতর্কবার্তা দিয়েছে, তাদের ভূখণ্ডে হামলা হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাতারের বাইরেও বার্তা

ইরাকি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সারমাদ আল-ব্যাইতি বলেন, দোহায় হামলা কেবল একটি দেশ নয়, পুরো অঞ্চলের প্রতি ইসরায়েলের শক্তি প্রদর্শনের বার্তা। ইসরায়েল দেখিয়ে দিল—তারা যখন যেখানেই প্রয়োজন মনে করবে, তখনই হামলা চালাতে পারে। এটিই আসল বিপদ।

তিনি মনে করেন, এর বিরুদ্ধে সৌদি আরব, উপসাগরীয় দেশগুলো, ইরাক, জর্ডান ও ইরানকে ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান নিতে হবে।

আতঙ্কে মিশর

দোহার মতো হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছে মিশর। তবে সমানতালে প্রস্তুতিও নিচ্ছে কায়রো।

মিশর আমেরিকাকে সতর্ক করে জানিয়েছে, তার মাটিতে হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করলে প্রতিপক্ষকে বিধ্বংসী পরিণতি ভোগ করতে হবে। লেবাননের দৈনিক আল-আখবার তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কায়রো আমেরিকানদের কাছে স্পষ্ট করে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। তাতে বলেছে, কাতারে ইসরায়েলের পদক্ষেপের মতো মিশরে হামাস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার যে কোনো প্রচেষ্টার ভয়াবহ পরিণতি হবে।

ইরাক কি পরের তালিকায়?

গবেষক মুনকিদ দাঘেরের মতে, ইসরায়েল এখন প্রচলিত সীমার বাইরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। যদিও ইরাকে হামাস নেতৃত্বের সরাসরি উপস্থিতি নেই, তার পরও দেশটিতে হামলার হুমকি দিয়ে আসছে ইসরায়েল।

জর্ডানের বিশ্লেষক হাজেম আয়ার্দ বলেন, এখন আর কেবল শীর্ষ হামাস নেতারা নয়; বরং দ্বিতীয় সারির নেতা, এমনকি গাজা সংহতি আন্দোলনের কর্মীরাও ইসরায়েলের টার্গেটে পরিণত হতে পারেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ হয়তো ইউরোপ পর্যন্ত গোপন হত্যা অভিযানে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাস

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য গ্যাব্রিয়েল সাওমা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ইরাক যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে তেলের মজুতের কারণে।

তিনি যোগ করেন, ইরাকে ভারসাম্য বজায় রাখা শুধু আঞ্চলিক শান্তির জন্য নয়, বৈশ্বিক তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্যও অপরিহার্য।

তথ্যসূত্র : শাফাক নিউজ, আলজাজিরা





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।