ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার (২৯ মে) দাবি করেছেন, হামাসের সশস্ত্র শাখার প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। তবে এ দাবি এখনও হামাসের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।
মোহাম্মদ সিনওয়ার হলেন হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই। ইয়াহিয়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি হামলায় ইয়াহিয়া নিহত হন।
গত ১৯ মাসের যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় হামাসের অনেক শীর্ষ নেতাই নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদ সিনওয়ার ছিলেন গাজায় জীবিত থাকা কয়েকজন পরিচিত শীর্ষ নেতার একজন। তবে ইসরায়েলের দখলে না থাকা গাজার অংশে এখনও হামাস তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর মাঝে মাঝে হামলা চালাচ্ছে।
সিনওয়ার হামাসের সশস্ত্র শাখার প্রধান হিসেবে জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত যেকোনো চুক্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। ফলে তার মৃত্যু যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। ইসরায়েল বলেছে, যতক্ষণ না সব জিম্মি মুক্ত হবে এবং হামাস সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস বা নিরস্ত্র হয়ে নির্বাসনে যাবে, যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
নেতানিয়াহু ইসরায়েলি সংসদে দেওয়া বক্তব্যে মোহাম্মদ সিনওয়ারসহ হামাসের কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুর কথা বলেন।
তিনি বলেন,
আমরা হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছি। মোহাম্মদ দেইফ, ইসমাইল হানিয়া, ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করেছি।
তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানায়, ১৩ মে খান ইউনিসে ইউরোপীয় হাসপাতালের নিচে একটি হামাস কমান্ড সেন্টারে চালানো হামলায় মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই বিষয়ে কিছু বলেনি।
সেসময় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ওই হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হন।
মোহাম্মদ সিনওয়ার ১৯৭৫ সালে খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় বিতাড়িত হয়ে গাজায় আসে। আজকের গাজার বেশিরভাগ বাসিন্দাই এ রকম শরণার্থীদের বংশধর।
১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিনি শাখা হিসেবে হামাস গঠনের পরই তিনি এই সংগঠনে যোগ দেন। পরে হামাসের সামরিক শাখা ‘কাসাম ব্রিগেডে’ সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং শীর্ষ পর্যায়ের যৌথ কমান্ডে জায়গা করে নেন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিনের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
২০০৬ সালে একটি ইসরায়েলি সেনা চৌকিতে হামলার পরিকল্পনায় তিনি অন্যতম ছিলেন। সেই হামলায় ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতকে আটক করা হয়। পাঁচ বছর বন্দি থাকার পর শালিতকে মুক্তি দিতে ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তিতে হামাসের ১,০০০-এর বেশি সদস্য মুক্তি পায়। তাদের মধ্যেই ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
তিন বছর আগে কাতারভিত্তিক আল জাজিরায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ সিনওয়ার বলেছিলেন, আমরা জানি কোন জায়গায় আঘাত করলে দখলদার ইসরায়েল সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে।
হামাস বলেছে, অতীতেও ইসরায়েল তাকে একাধিকবার টার্গেট করেছিল এবং ২০১৪ সালে একবার তাকে নিহত বলেও দাবি করা হয়েছিল।
অতি গোপনে থাকতেন মোহাম্মদ সিনওয়ার। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি ভিডিও প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়, একটি গাড়িতে বসা এক দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তি মোহাম্মদ সিনওয়ার। ভিডিওটি একটি গাজা টানেলের ভেতরের দৃশ্য বলে দাবি করা হয়। তবে হামাস সেই ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
এপি