ইতালির রোমে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। এটি আলোচনা চালানোর পঞ্চম দফা হলেও এখনো দুই দেশের মধ্যে বড় মতভেদ রয়ে গেছে। বিশেষ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে।
এর আগে এপ্রিল মাসে ওমানে প্রথম দফা আলোচনা হয়। এরপর আরও চারবার আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে একবার অর্থনীতিবিদরাও অংশ নেন। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশেষ প্রতিনিধি ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানকে এক ফোঁটাও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। অথচ আগের চুক্তি অনুযায়ী ইরান ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত। নতুন এই অবস্থান ইরানের জন্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
এর জবাবে ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইরান কারও অনুমতির প্রয়োজন মনে করে না। তিনি বলেন, এই আলোচনায় থেকে কোনো ফল আসবে বলে তার আশা নেই।
এদিকে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি আলোচনায় অগ্রগতি না হয়, তাহলে হামলার আশঙ্কা বাড়তে পারে।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফুয়াদ ইযাদি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর লিবিয়া মডেলের মতো চাপ দিতে চায়, যা ইরান মেনে নেবে না। আরেকজন বিশ্লেষক জানান, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারলেও পারমাণবিক বোমা বানানোর জন্য আরও অনেক প্রযুক্তি লাগে, যেগুলো ইরানের নেই। তাছাড়া অতীতে পশ্চিমা দেশগুলো চুক্তি ভেঙেছে, তাই ইরান নিজের শক্তি ধরে রাখতে চায়।
একজন মার্কিন বিশ্লেষক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘শূন্য ইউরেনিয়াম’ চাওয়া অনেক বেশি কঠোর। এতে আলোচনা আরও জটিল হয়ে পড়ছে।
এছাড়া চীনা বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাবের বিষয়ও তুলতে চায়, যা আলোচনা কঠিন করে তুলছে। দুই পক্ষের কেউই আগে ছাড় দিতে চায় না, ফলে আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে।
তবুও বিশ্লেষকরা মনে করছেন আলোচনা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান হতে পারে শুধু দর কষাকষির কৌশল। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র দু’পক্ষই সংঘাত এড়িয়ে চুক্তিতে যেতে চায়। কোনো তৃতীয় পক্ষ যদি মধ্যস্থতা করে, তাহলে সমাধানের পথ খোলা থাকতে পারে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হলেও আলোচনা চালু আছে এবং সমঝোতার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে এসব প্রচেষ্টা থেকেই একটা চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে—যদি দুই দেশ বাস্তববাদী কূটনীতি ও সদিচ্ছা দেখায়।