বিশ্ব

গাজায় ফুরিয়ে যাচ্ছে খাবার | কালবেলা

গাজায় ফুরিয়ে যাচ্ছে খাবার | কালবেলা


গাজা অবরুদ্ধ ছয় সপ্তাহ ধরে। উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দার সব সরবরাহ বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। এতে যুদ্ধবিরতির সময় মজুত করা খাবারও ফুরিয়ে আসছে। সংকটে দাতব্য সংস্থাগুলো জরুরি খাবার বিতরণ করতে পারছে না। বেকারিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারে কোনো পণ্য নেই।

সরবরাহ না থাকায় পানির তীব্র হাহাকার। হাসপাতালে জরুরি ওষুধের অভাবে চিকিৎসা ব্যাহত। এখন অতিদ্রুত গাজার চেকপয়েন্টগুলো খোলা না হলে ক্ষুধায় নিশ্চিতভাবেই মৃত্যু হবে বেশিরভাগ গাজাবাসীর।

খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে প্লাস্টিকের ছাউনি ঘেরা তাঁবুতে নিজের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন আখরাস (৬৪)। সেখানেই তিনি কার্ডবোর্ড জ্বালিয়ে আগুন জ্বালান এবং একটি মটরশুঁটি ক্যান রান্না করেন। এটাই তাদের শেষ খাবার। তিনি বলেন, আমরা ১৩ জনের পরিবার। এক ক্যান মটরশুঁটি দিয়ে কী হবে?

আখরাস আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ থেকে বেঁচে গেছি, প্রতিদিন সকাল-বিকেল বোমাবর্ষণ সহ্য করেছি। কিন্তু আমরা আর ক্ষুধা সহ্য করতে পারছি না। না আমরা, না আমাদের সন্তানরা।’

উত্তরে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে শত শত ফিলিস্তিনি একটি খোলা জায়গায় রান্না করা গরম ভাতের জন্য একটি সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন। ছোট শিশুরা সামনে এগিয়ে আসছে, হাতে বালতি। পরিবারের জন্য কিছু খাবার নিয়ে যেতে চায় তারা। এই জরুরি খাবার বিতরণ যেসব ত্রাণ সংস্থা চালাচ্ছে, তারা বলেছে, যদি নতুন করে খাবার সরবরাহ না হয়, তাহলে আর কয়েকদিনের মধ্যেই তাদেরও এই খাবার বিতরণ বন্ধ করে দিতে হবে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি আগে গাজার ২৫টি বেকারিতে রুটি সরবরাহ করত। এখন সবগুলো বেকারি বন্ধ। অল্প পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী বিতরণও বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার জুলিয়েট তৌমা বলেছেন, সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র শেষ হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজা অবরোধ করায় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গেছে। এর মানে, শিশু ও নবজাতকরা না খেয়ে ঘুমোতে যাচ্ছে। প্রতিদিন এই সামগ্রী ছাড়া গাজা গভীর দুর্ভিক্ষের দিকে আরও একধাপ এগোচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, গাজা শাসনকারী হামাস ত্রাণের অপব্যবহার করছে। হামাস যোদ্ধাদের হাতে যাতে ত্রাণ না পৌঁছায়, সেজন্যই তারা সব সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। হামাস তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বরং ইসরায়েলকে ক্ষুধাকে যুদ্ধকৌশল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করেছে।

চিকিৎসা ত্রাণ সংস্থা মেদসাঁ সঁ ফ্রোঁতিয়ের জানিয়েছে, তারা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীর দেখা পাচ্ছেন। স্তন্যদানকারী মায়েরা অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত থাকায় বাচ্চাকে দেওয়ার মতো যথেষ্ট দুধ উৎপাদন করতে পারছেন না।

নুসেইরাতের বাসিন্দা নেয়ামা ফারজালা প্রতিদিন ভোর ৬টায় বাইরে বের হন। তিনি এক গামলা ভাতের জন্য ভূখণ্ডের রান্নাঘরগুলোতে ঘুরে বেড়ান। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিমান হামলায় মারা না যাই, অনাহারে মারা যাব। আমার ছোট ছেলেটি যখন বলে—মা, আমি এক গ্লাস দুধ চাই, আমার বুক ফেটে যায়।’

পানিশূন্য হতে চলেছে গাজা

এদিকে গাজার ৭০ শতাংশ পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজার কর্মকর্তারা আনাদোলু এজেন্সি ও আলজাজিরাকে এ অভিযোগ করেছেন। বুধবার আলজাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। যার ফলে ফিলিস্তিনি উপত্যকায় মোট পানি সরবরাহের ৭০ শতাংশ কার্যকরভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

ইসরায়েলি কোম্পানি মেকোরোট গাজায় সিংহভাগ পানি সরবরাহ করে। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থার মধ্যস্থতায় কোম্পানিটি খাবার পানি সরবরাহ করে আসছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মেকোরোটে পাইপলাইনে হস্তক্ষেপ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওষুধের জন্য হাহাকার

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজার হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের মজুত বিপজ্জনক ও অভূতপূর্ব পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় ওষুধের ৩৭ শতাংশ, চিকিৎসা সামগ্রীর ৫৯ শতাংশ, ক্যান্সার ও রক্তের ৫৪ শতাংশ ওষুধ, সার্জারি, আইসিইউ ও জরুরি বিভাগের ওষুধ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১১ গুরুতর অসুস্থ ফিলিস্তিনিকে জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।