বিশ্ব

নতুন অস্ত্রে শান, ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভারত-পাকিস্তান

নতুন অস্ত্রে শান, ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভারত-পাকিস্তান


পাক-ভারত যুদ্ধবিরতি চলছে, তবে থেমে নেই উত্তেজনা। ভারতের জম্মু থেকে পাকিস্তানের পাঞ্জাব—দুই দেশের আকাশেই এখন টান টান নজরদারি।

এর আগে ৮ মে রাত ৮টার পরপরই জম্মুর আকাশে উড়ে যায় লাল রঙের ফ্লেয়ার। পাকিস্তান থেকে আসা ড্রোন লক্ষ্য করে গুলি চালায় ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে এক নতুন যুদ্ধের—ড্রোন-যুদ্ধের।

বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এবারই প্রথমবারের মতো ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ড্রোন ব্যবহার করেছে।

টানা চারদিনের সংঘর্ষ শেষ হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতিতে। তবে সংঘর্ষ থামলেও শুরু হয়েছে নতুন প্রতিযোগিতা—ড্রোন প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে সামরিক আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা।

যুদ্ধবিরতির আড়ালে চলছে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। উভয় দেশের ক্ষমতাসীন সরকার এই উত্তেজনাকে ব্যবহার করছে অভ্যন্তরীণ সমর্থন নিশ্চিত করতে এবং প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে। ড্রোন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতা এখন দুই দেশের সামরিক নীতির কেন্দ্রে।

এ বিষয়ে ভারত ড্রোন প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছে। ড্রোন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার প্রধান স্মিত শাহ জানান, দেশটি আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে পারে, যা আগের তুলনায় তিনগুণ বেশি। জরুরি প্রতিরক্ষা ক্রয়ের জন্য ৪.৬ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে ভারত, যার একটি বড় অংশ ড্রোন সংগ্রহে ব্যয় হবে।

ভারতের শীর্ষ ড্রোন কোম্পানি আইডিয়াফোর্জের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশাল সাক্সেনা জানান, এখন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিদিনই ড্রোন নির্মাতাদের ট্রায়াল ও প্রদর্শনের জন্য ডাকছেন।

অন্যদিকে উচ্চমূল্যের যুদ্ধবিমান ব্যবহার না করেও সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে পাকিস্তান ড্রোন প্রযুক্তিকে বেছে নিয়েছে। দেশটি চীন ও তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে ড্রোন উৎপাদনে জোট গঠন করেছে।

পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পার্ক এবং তুর্কি কোম্পানি বায়কার যৌথভাবে তৈরি করছে ‘ওয়াইআইএইচএ-থ্রি’ ড্রোন, যা মাত্র ২-৩ দিনেই প্রস্তুত করা সম্ভব।

প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পুলওয়ামায় একটি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ভারতীয় পর্যটক। ভারত পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসীদের দায়ী করে এবং ৭ মে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায়। পরদিন পাকিস্তান ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করতে ৩০০-৪০০ ড্রোন পাঠায়, যেগুলো ১,৭০০ কিমি সীমান্তজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ভারত প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের হ্যারপ, পোল্যান্ডের ওয়ারমেট এবং নিজস্ব ড্রোন ব্যবহার করে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালায়।

পাকিস্তান এসব ড্রোনের বিরুদ্ধে ‘ফেক রাডার’ বসিয়ে ও ড্রোন জ্বালানি শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থেকে সেগুলো গুলি করে ভূপাতিত করে। উভয়পক্ষই দাবি করেছে যে তারা সফলভাবে প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করেছে।

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার ও ড্রোন বিশেষজ্ঞ অংশুমান নারাং জানান, আমার প্রত্যাশার চেয়েও দশগুণ বেশি সফল হয়েছে ভারতের প্রতিক্রিয়া।

ভারত দাবি করছে, তারা নির্ভুলভাবে সন্ত্রাসী ও সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান তুলনামূলকভাবে কম আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের সামরিক সক্ষমতা প্রকাশ করতে পেরেছে।

কিংস কলেজ লন্ডনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওয়াল্টার লাডউইগ বলেন, ড্রোন দিয়ে সামরিক চাপ সৃষ্টি করা যায়, আবার সরাসরি যুদ্ধ শুরু না করেও শক্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়। ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, ড্রোনের খরচ কম, কিন্তু প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা অনেক।

ভারতের জন্য বড় একটি দুর্বলতা হলো—চীনা উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা। আইডিয়াফোর্জসহ অন্যান্য ভারতীয় ড্রোন কোম্পানিগুলো এখনো চীন থেকে চুম্বক ও লিথিয়াম ব্যাটারি আমদানি করে। ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের সময় সরবরাহ ব্যবস্থাও অস্ত্রে পরিণত হতে পারে। তাই ভারতের উচিত হবে বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

যদিও সরাসরি যুদ্ধ এড়ানো গেছে, কিন্তু এই ড্রোন যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন সামরিক ভারসাম্য তৈরি করছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ড্রোনকে ঘিরে যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তা শুধু দুই দেশের কৌশলগত অবস্থান বদলাচ্ছে না, বরং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকেই নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

সূত্র : রয়টার্স





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।