বিশ্ব

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের পাওয়া ফিল্ড মার্শাল র‌্যাংক কী?

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের পাওয়া ফিল্ড মার্শাল র‌্যাংক কী?


ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর পদোন্নতি পেয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির। এ অভিযানের পর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সামরিক পদোন্নতি ফিল্ড মার্শাল র‌্যাংক পেয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি এ পদোন্নতি পেয়েছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করেছে যে, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইতিহাসে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি এ র‌্যাংক পেয়েছেন।

কে ছিলেন প্রথম ফিল্ড মার্শাল?
মোহাম্মদ আয়ুব খান ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম ফিল্ড মার্শাল। তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

এর এক বছর পর ১৯৫৯ সালে সেনাবাহিনীর নিয়মিত অবসর বয়সের কাছাকাছি আসার সময় আইয়ুব খান নিজেকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করেন। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানের বেসামরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি এ পদ গ্রহণ করছেন। অক্টোবর ১৯৫৯-এ প্রেসিডেন্সিয়াল কেবিনেট একটি ঘোষণার মাধ্যমে তাকে এই পদে উন্নীত করে।

ফিল্ড মার্শাল পদের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব ও ব্যবহার
ফিল্ড মার্শাল পদটি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন তাৎপর্য বহন করে। এটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সামরিক ঐতিহ্যের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ সামরিক মডেল অনুসরণকারী দেশগুলোতে, যেমন যুক্তরাজ্য, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে এটি একটি পাঁচ তারকা সম্মানসূচক পদ। যুদ্ধকালীন অসাধারণ নেতৃত্বের জন্য এ র‌্যাংক দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্নার্ড মন্টগোমারিতে অসামান্য অবদানের জন্য যুক্তরাজ্যে ফিল্ড মার্শাল র‌্যাংক পান। এছাড়া ভারতে মাত্র দুজন ফিল্ড মার্শাল র‌্যাংক পেয়েছেন। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে স্যাম মানেকশ এবং ১৯৮৬ সালে সম্মানসূচক স্বীকৃতি হিসেবে কেএম কারিয়াপ্পা এ র‌্যাংক পান।

অন্যান্য দেশে এই পদের সমতুল্য পদবি ভিন্ন নামে রয়েছে। জার্মানিতে, জেনারেল ফিল্ড মার্শাল ছিল বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি উল্লেখযোগ্য পদ। আর রাশিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের মার্শাল (পরবর্তীতে রাশিয়ান ফেডারেশনের মার্শাল) একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো। এই পদগুলো সাধারণত যুদ্ধকালীন বা অসাধারণ সেবার জন্য সংরক্ষিত। যুক্তরাষ্ট্রে, জেনারেল অব দ্য আর্মি নামে এ পদের সমমর্যাদার একটি পদ রয়েছে। যদিও এটিকে ফিল্ড মার্শাল বলা হয় না।

পদটির তাৎপর্য
ফিল্ড মার্শাল পদ প্রদান গভীর জাতীয় প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে। এটি কেবল একটি সামরিক পদবি নয়, বরং একটি জাতীয় সম্মান। এ পদবি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং সম্মান রক্ষায় একজন ব্যক্তির ভূমিকার প্রশংসার প্রমাণস্বরূপ। এটি রাষ্ট্রের সেই ব্যক্তির নেতৃত্ব, কৌশলগত দূরদর্শিতা এবং দেশের সেবার প্রতি সর্বোচ্চ আস্থার প্রতিফলন ঘটায়।


পাকিস্তানে পদটি কীভাবে প্রদান করা হয়?
পাকিস্তানে ফিল্ড মার্শাল পদটি ফেডারেল সরকার কর্তৃক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং ফেডারেল ক্যাবিনেটের যৌথ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এটি সাধারণত একজন বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধানের অসাধারণ সামরিক সাফল্য বা যুদ্ধকালীন বা অস্তিত্বগত হুমকির সময় জাতীয় সেবার জন্য প্রদান করা হয়।

ভারতে কতজন ফিল্ড মার্শাল আছেন?

ভারতে এখন পর্যন্ত দুজন ফিল্ড মার্শাল রয়েছেন। প্রথমবার এটি প্রদান করা হয় স্যাম মানেকশকে ১৯৭৩ সালে দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তার অসামান্য সেবা এবং নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এটি অর্জন করেন তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মানেকশকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং যুদ্ধের পরপরই তাকে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) হিসেবে নিয়োগ করেন।

১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর প্রধান (চিফ অব দ্য আর্মি স্টাফ) হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে মানেকশকে রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি অনুষ্ঠানে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়।

দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি ভারতে ফিল্ড মার্শাল পদে ভূষিত হন তিনি হলেন কোদান্দেরা এম কারিয়াপ্পা। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম কমান্ডার-ইন-চিফ ছিলেন। এই পদটি পরবর্তীতে চিফ অব দ্য আর্মি স্টাফ হিসেবে পরিচিত হয়। কারিয়াপ্পার অনবদ্য সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৬ সালের ১৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি বিশেষ সমারোহে তাকে ফিল্ড মার্শাল পদে ভূষিত করা হয়।





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।