অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল, আস্থা ভোট, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিল- এই চারটি ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা পাবেন- এ রকম প্রস্তাব করেছে বিএনপি।
রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে মধ্যাহ্ন বিরতির পরে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা জানান।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে আমরা শুনেছি আস্থা বিল এবং অর্থ বিলের ক্ষেত্রে প্রায় সবাই একমত।
রাষ্ট্র পরিচালনার সুবিধার্থে এবং সরকারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার স্বার্থে আমরা চারটি বিষয় এখানে উল্লেখ করেছি। অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল, আস্থা ভোট এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন- এই চারটি বিষয় বাদে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের বক্তব্য এবং ভোট প্রদান করতে পারবে। তাতে তাদের সংসদ সদস্যপদ বিলুপ্ত হবে না।
বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। তাতে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
নারী আসন নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বলেছি- নারীদের আসন সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০ তে উন্নীত করার ব্যাপারে আমরা একমত। কিন্তু সেটা বিদ্যমান পদ্ধতিতেই মনোনয়ন হবে, সেটা আমাদের প্রস্তাবে বলেছি।
তবে এটা (নারী আসন সংখ্যা উন্নীত) আমরা বলেছি, পরবর্তী পার্লামেন্ট গঠন করার পরে, যখন তিনশ প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হবে এবং সংসদে এই সংক্রান্ত সংশোধনী গৃহীত হলে বর্তমানের ৫০ এবং আরও ৫০ নিয়ে যে ১০০ গঠিত হবে সেই ৪০০ সদস্যবিশিষ্ট সংসদে বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করে কোন পদ্ধতিতে পরবর্তী সংসদে নারী আসনের নির্বাচনটা হবে তখন সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। বর্তমানের জন্য বিদ্যমান পদ্ধতি আমরা মনে করেছি যে এপ্রোপ্রিয়েট।
এ ছাড়া ভোটের ন্যূনতম বয়স ২১-এর ক্ষেত্রে বিএনপি দ্বিমত পোষণ করেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সব স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদে বিরোধী দল নেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। আমরা বলেছি, এটা বাস্তবায়ন নয়। এটা সংসদের প্র্যাকটিস ও সংসদের ওপরে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
তবে আমরা এভাবে একমত হয়েছি যে, কিছু কিছু স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদে যেমন পাবলিক আন্ডারটেইকেন কমিটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি এই জাতীয় কিছু কিছু কমিটি বিরোধীদলীয়র মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা যায়, এ বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।
রোববার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির প্রতিনিধিদল। সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনা করছি। আলোচনা অব্যাহত আছে, মোটামুটি ভালো এগুচ্ছে। বেশ কিছু বিষয়ে কাছাকাছি এসেছি, বেশ কিছু বিষয়ে আমাদের দ্বিমত আমরা বলেছি।
আমরা বিশ্বাস করি যে, গণতন্ত্রে এটাই স্বাভাবিক। আমরা বাকশালে বিশ্বাস করি না যে, এমন কিছু করা হবে যে এটা সবাইকে বাধ্য হওয়া লাগবে। আমরা মনে করি, দেশ ও জনগণের স্বার্থ চিন্তা করে যা সংগত যা সর্বাপেক্ষা উত্তম তেমন কিছুই হওয়া উচিত, তেমন কিছুই করা উচিত।