রাজনীতি

নির্বাচনের আগে সরকারের কাছে দুটি কাজ দেখতে চায় এনসিপি

নির্বাচনের আগে সরকারের কাছে দুটি কাজ দেখতে চায় এনসিপি


ছাত্র-জনতার গণঅব্যুত্থানের সময় ‘হত্যা ও দমন-পীড়নের’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান করার পরই নির্বাচন চেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

যেসব সংস্কার করলে রাষ্ট্রকাঠামোর গুণগত আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে, সেই পথ তৈরির আহ্বান এবং বিচার ও সংস্কারকাজ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথাও বলেছে দলটি।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বেলা দেড়টায় জাতীয় সংসদের এল ডি হলে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠকের মধ্যবর্তী বিরতিতে বেরিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ও ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এই বৈঠক শুরু হয়। সংলাপে অংশ নেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে সংলাপের শুরুতে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বক্তব্য দেন। যেসব সংস্কার করলে রাষ্ট্রকাঠামোর গুণগত আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে, ঐকমত্য কমিশনের কাছে সেই পথ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় এনসিপির আত্মপ্রকাশ হয়েছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থান কেবল কোনো ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। বরং কীভাবে রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে, সে রকম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল।’

আখতার হোসেন বলেন, ‘এনসিপি মনে করে অন্তরবর্তীকালীন সরকার যে এজেন্ডা-ম্যানডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে।’

‘নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে, কিন্তু তার আগে বিচার ও সংস্কার সরকারকে দৃশ্যমান করতে হবে। এটার জন্য যেটুকু সময় পাওয়া প্রয়োজন, সরকার সে সময়টুকু পেতে পারে। কোনোভাবেই কাজ ব্যতিরেকে সময় পেতে পারে না।’

এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সংবিধানের বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, দুদক ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতো বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে পারিনি।’

‘তবে পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন কেন অন্তর্ভুক্ত হয়নি, সে বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছি। আমাদের মতামতগুলো জানাতে চেয়েছি।’

গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।

আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে সংবিধানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বরং এখানে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। তার মধ্য দিয়েই সাংবিধানিকভাবে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলছি এবং বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কথা বলছি। সেই প্রেক্ষাপটে কীভাবে সংবিধান পুনর্লিখন করা যায় এবং গণপরিষদ নির্বাচনের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছি।’

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আমরা ১২৯টির সাথে একমত হয়েছি। যেসব বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, সেগুলোর বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। মূলত এখন পর্যন্ত আমরা তিনটি বিষয়ে কথা বলেছি। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, প্রটেকশন অব সিটিজেন বা নাগরিকদের নিরাপত্তা।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরঙ্কুশ অধিকার নিশ্চিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত কথা বলেছি। দ্বিতীয় বিষয় পিসফুল ট্রানজেকশন অব পাওয়ার বা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর। আমরা দেখেছি, যখনই রাষ্ট্রের পাওয়ার ট্রানজেকশনের সময় এসেছে, তখনই দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷’

তিনি বলেন, ‘একটি নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর কীভাবে হবে, এই বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। যাতে আমাদের অতীতের যেসব দুঃখ স্মৃতি রয়েছে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি আর না হয়।’

সংসদকে শক্তিশালীকরণ নিয়ে হাসনাত বলেন, ‘তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সংসদের স্থিতিশীলতার নাম করে ৭০ অনুচ্ছেদ দিয়ে কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে। সেটি নিয়ে কথা হচ্ছে। যেটির মধ্য দিয়ে আমরা একসঙ্গে সংসদে স্থিতিশীলতা, সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা, আমাদের সংসদকে কীভাবে আরও বেশি কার্যকর করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।