বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সংস্কার একটা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া, হতেই হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে দলের পক্ষে সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কার একটা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া, হতেই হবে। আমি যখন একা আমার ঘরে থাকি তখন ঘরের যে সেটআপ বিয়ের পর সেটা বদলে যাবেই। আমাদের যখন সন্তান হবে তখন সেটা আবার বদলে যাবে। আরেকটা সন্তান হলে আরও বদলাবে। তাদের বয়স যখন বাড়বে তখন আবার বদলে যাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়, বদলাবেই। অনিবার্য চলমান প্রক্রিয়া বলছি এটাকে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই ভালো চাই। কিন্তু খুব ভালো করার জন্য যেন আমরা এত সময় না নেই, যাতে মানুষের পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা স্তিমিত হয়ে যায়। নিশ্চয় আমরা ভালো করতে চাই এবং এ ভালো করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, সব সময় থাকবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমরা গতকাল প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, বিএনপির চাইতে বেশি সংস্কার বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল করেছে? রাজনৈতিকভাবে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা তো বিএনপি করেছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, তত্ত্বাবধায়ক শাসনব্যবস্থা বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি গ্রাম সরকার প্রবর্তন করেছে। তাতে আর কত দূর পর্যন্ত আমরা প্রশস্ত করতে চাই। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিএনপি গঠন করেছে। আজকে অর্থনীতির সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত হলো ভ্যাট, যা বিএনপি করেছে। আজকে অর্থনীতির মূল স্তম্ভ পোশাকখাত বিএনপির হাতে হয়েছে, কৃষি উন্নয়ন, প্রবাসী কর্মসংস্থান, পল্লী বিদ্যুতায়ন থেকে শুরু করে সমবায় উন্নয়ন, কুটির শিল্প। বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে না, বিএনপি সংস্কারের দল।
বিএনপির এ সিনিয়র নেতা আরও বলেন, তারপরও কেউ কেউ নানা কথা বলেন, তারা যখন সংস্কারের ‘স’ উচ্চারণ করে নাই, তখন তো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছেন। কেউ যখন সংস্কারের কথা ভাবেনি তখন শহীদ জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন। আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি এবং আমরা এটা বলেছি, এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব থাকলে সেটা সাদরে গ্রহণ করব। কাজেই যদি ঐকমত্য কমিশনের সনদ নাও হয় বিএনপির জন্য সনদ আছে একটা সংস্কারের সনদ। কাজেই আমরা সংস্কারের পক্ষে।
নজরুল বলেন, আমরা একটা জিনিস বলব, সব কিছুর ওপরে জনগণ। জনগণ কার মাধ্যমে সম্মতি জানায় আমরা জানি। আমরা বিশ্বাস করি, এমন যোগ্য মানুষ এই কমিশনের দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের নেতৃত্বে এ কমিশন কাজ করেছে। তাদের সহযোগিতায় আমরা আগামী দিনে আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সংস্থাপন সচিব মনিরুজ্জামান খান অংশ নেন।
ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে রয়েছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এরপর থেকে সংসদ ভবনের এলডি হলে আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশন সদস্যরা আলাদা আলাদাভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে।
সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম বৈঠকটি হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সঙ্গে। এ পর্যন্ত তারা ১১টি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক শেষ করেছে।