৩৮ বছর বয়সেও যখন ক্লাব বিশ্বকাপের মতো বিশ্বমঞ্চে বল পায়ে ম্যাজিক দেখান লিওনেল মেসি, তখন স্টেডিয়ামের ৬৫ হাজার দর্শকের চোখ তার প্রতিটি ছোঁয়ায় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। যদিও পিএসজির কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে মেসির ক্লাবকে সেইসঙ্গে এক প্রশ্নও দর্শকদের মনের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া শুরু হয়েছে, তাহলে কি এটাই ছিল বিশ্বমঞ্চে তার শেষ নৃত্য?
ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় প্রাক্তন ক্লাব পিএসজির কাছে ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়েছে ইন্টার মায়ামি। সে ম্যাচেই হয়তো শেষবারের মতো বিশ্বের চোখের সামনে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেখা গেল ফুটবল ইতিহাসের সেরা অধ্যায়ের একটিকে—লিও মেসিকে।
‘পিএসজি এখন সবকিছু জিতছে। কিন্তু মানুষ এখনো টিকিট কাটে শুধু মেসিকে দেখার জন্য,’—ম্যাচ ইন্টার মায়ামির কোচ ও মেসির সাবেক সতীর্থ হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো বলেন।
পিএসজির ডিফেন্ডার লুকাস বেরালদোও দারুণ আবেগে বলেন, ‘শৈশবে যার খেলা টিভিতে দেখে বড় হয়েছি, তার বিপক্ষে মাঠে নামাটা ছিল স্বপ্ন পূরণের মতো!’
মেসির ভবিষ্যৎ: থাকবে কি, যাবে?
বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের এমএলএস মৌসুম শেষেই ইন্টার মায়ামির সঙ্গে মেসির পথচলা শেষ হওয়ার কথা। ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন কি না—সেটা নিয়েও নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি।
মেসির ইন্টার মায়ামির সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ অবশ্য আশাবাদী, মেসিকে তারা আগামী বিশ্বকাপেও দেখবেন। তবে সাংবাদিক গুইলেম বালাগের মতে, ‘নিজেও এখনো জানেন না মেসি নিজের ভবিষ্যৎ কীভাবে দেখছেন।’
পরিবারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের স্বাচ্ছন্দ্য—সব মিলিয়ে ইন্টার মায়ামিতেই তিনি থাকতে পারেন আরও কিছুদিন। তবে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্নটা এখনো অমীমাংসিত।
শেষ ম্যাচে যেমন ছিলেন মেসি
এই ম্যাচে গোল না পেলেও কিছু মুহূর্তে পুরোনো দিনের মেসির ঝলক ঠিকই ফিরেছিল। শেষ দিকে এক ফ্রি-কিকের সময় গোটা স্টেডিয়াম যেন চেয়েছিল জাদুকরী এক গোল। কিন্তু বল থেমে যায় দেয়ালে।
সাবেক চেলসি তারকা জন ওবি মিকেলের ভাষায়, ‘মেসি হেঁটে বেড়ায়, কিন্তু বল পায়ে পেলেই যেন ভিনগ্রহের খেলোয়াড় হয়ে ওঠে!’
তিনি পাস দেন, তৈরি করেন সুযোগ—তবে গোল আসেনি। একটি দুর্দান্ত চিপ পাসে লুইস সুয়ারেজকে দারুণ সুযোগ এনে দেন তিনি। ফুটবলপণ্ডিত ডন হাচিসনের ভাষায়, ‘পুরো টুর্নামেন্টে এটিই ছিল সবচেয়ে নান্দনিক পাস।’
মেসির শট ঠেকিয়েছেন দোনারুম্মা, একটি ফ্রি-কিক গেছে দেয়ালে, আর একটি হেড ফিরিয়েছে স্মৃতির পাতা—২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ম্যানইউর বিপক্ষে সেই বিখ্যাত হেড গোলের।
শেষের শুরু?
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তিনি খেললেন সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে। আর সেটাই হলো এমন এক ক্লাব, যেখানে তিনি নিজের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারেননি। পিএসজিতে ৩২ গোল করলেও এনে দিতে পারেননি কাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।
এখন পিএসজি সেই স্বপ্নপূরণ করেছে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পেকে ছাড়াই। ট্রেবল জয়ের পর ক্লাব বিশ্বকাপও জিততে চায় তারা।
এই প্রতিযোগিতা আবার ফিরবে ২০২৯ সালে। তখন মেসির বয়স হবে ৪২। হয়তো তখন আর দেখা যাবে না তাকে।
তাই প্রশ্নটা থেকেই যায়—এটাই কি ছিল ফুটবল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ জাদুকরের শেষ বিশ্বমঞ্চে পারফরম্যান্স?
যদি হয়, তবে এমন অবসানও মঞ্চপ্রেমীদের চোখে এক কিংবদন্তির মঞ্চ ছাড়ার মহাকাব্য।
একজন মেসি চলেও যান, কিন্তু তার ছায়া রয়ে যায় ফুটবলের প্রতিটি ঘাসে, প্রতিটি বল স্পর্শে।