খেলাধুলা

সেল্টিক ফুটবল ক্লাব: যার সমর্থকরা সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে অনড়

সেল্টিক ফুটবল ক্লাব: যার সমর্থকরা সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে অনড়


যখন গাজায় একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে শিশুর কান্না আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়ে যাচ্ছে মানবতা, তখন স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের এক ফুটবল স্টেডিয়ামে বারবার গর্জে উঠছে এক অন্যরকম প্রতিবাদ—ফিলিস্তিনের প্রতি এক মানবিক দায়বদ্ধতা। সেই ক্লাবটির নাম সেল্টিক।

সেল্টিক ফুটবল ক্লাবের সমর্থকরা বারবার দেখিয়ে দিচ্ছেন, ফুটবল শুধু খেলা নয়—এটা একটা ন্যায়ের কণ্ঠস্বর। উয়েফা জরিমানা আরোপ করার পরেও সেল্টিকের সমর্থকরা থেমে থাকেনি। তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন—ফিলিস্তিনের পাশে তাদের অবস্থান কখনোই বদলাবে না।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে সেল্টিক পার্ক পরিণত হয় এক রঙিন প্রতিবাদের মঞ্চে। ৬০ হাজারেরও বেশি দর্শক ‘You’ll By no means Stroll Alone’ গানে কণ্ঠ মিলিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকায় ঢেকে দেন পুরো স্টেডিয়াম। তবে ইউরোপের এক ক্লাব হয়ে কেন তাদের ফিলিস্তিনের প্রতি এত সমর্থন, যেখানে অন্য সবাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? জানতে হলে ঘুরে দেখতে হবে সেল্টিক ক্লাবের প্রতিষ্টা।

প্রতিবাদ নয়, এটা আমাদের পরিচয়

১৮৮৮ সালে দরিদ্র আইরিশ অভিবাসীদের সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় সেল্টিক ক্লাব। সেই মানবিক চেতনাই আজ ফুটে উঠেছে সমর্থকদের মাধ্যমে।

ক্লাব কর্তৃপক্ষ যখন রাজনৈতিক বার্তা না দেওয়ার আহ্বান জানায়, তখন ক্লাবের সমর্থক গোষ্ঠী গ্রিন ব্রিগেড জানিয়ে দেয়—

‘অন্যায়ের সামনে নিরপেক্ষ থাকা মানে হচ্ছে, অত্যাচারীর পাশে দাঁড়ানো।’

তারা মনে করিয়ে দেন—এই ক্লাবের ইতিহাসই হলো নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানোর ইতিহাস।

শুধু ব্যানার নয়, কার্যকর সহমর্মিতা

২০১৬ সালে যখন উয়েফা ফিলিস্তিনের পতাকা দেখানোর কারণে ক্লাবকে জরিমানা করে, তখন সমর্থকরা ১ লাখ ৭৬ হাজার পাউন্ডেরও বেশি তহবিল সংগ্রহ করে ফিলিস্তিনে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যয় করেন। সেই অর্থে প্রতিষ্ঠা পায় ‘আইদা সেল্টিক’ নামের এক শরণার্থী ফুটবল ক্লাব, বেথলেহেম শহরে।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ায়, সেল্টিক সমর্থকরা আবারও উদ্যোগ নেন—এইবার চিকিৎসা সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহে।

ফুটবলের দ্বিচারিতা ও প্রতিবাদের রূপ

যেখানে সেল্টিক সমর্থকদের শাস্তি দেওয়া হয়, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী রেঞ্জার্সের সমর্থকরা যখন ইসরায়েলের পতাকা উত্তোলন করেন বা তাদের জন্য নীরবতা পালন করেন, তখন কোনো শাস্তি আসে না। এই দ্বিমুখী নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে গ্রিন ব্রিগেড প্রশ্ন তোলে—‘ইউক্রেনের প্রতি সংহতি প্রশংসিত হলে, ফিলিস্তিনের প্রতি কেন নয়?’

এই ক্লাব কেবল একটি দল নয়, এটি একটি মূল্যবোধের প্রতীক

গ্রিন ব্রিগেড জানায়, ‘ফুটবলই এখনো একমাত্র জায়গা, যেখানে সাধারণ মানুষ কণ্ঠ তুলতে পারে। এই ক্লাবের আদর্শকে আমরা ভুলতে পারি না।’

সেল্টিক সমর্থকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন—তারা শুধু গোলের জন্য চিৎকার করেন না, তারা সুবিচারের জন্য লড়েন।

গ্লাসগো থেকে গাজা—এ লড়াই শুধু মাঠের নয়, এটা মানুষের। এবং সত্যিই, ‘You’ll by no means stroll alone’





Source link

Shares:
মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।